
সারা দেশে ধর্ষণ ও নারীদের প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রবিবার, রাত সাড়ে এগারোটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। তার আগে রাত দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে ধর্ষণ বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে একটি মশাল মিছিল বের করে একদল শিক্ষার্থী। মিছিলটি শহীদ মিনারের পাদদেশে এসে শেষ হয়। সেখানে আগে থেকে প্রতিবাদ সমাবেশ করছিলো নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে ধর্ষণ বিরোধী মঞ্চ। মিছিল শেষে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন ইতিহাস বিভাগের ৪৮ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আয়শা সিদ্দিকা বৃষ্টি। এসময় ধর্ষণ বিরোধী মঞ্চের মুখপাত্র সাইয়েদা শাওলী বলেন, দেশের এমন একটি ক্রান্তিলগ্ন এসে উপস্থিত হয়েছি যে আমাদের মধ্যে আর কোন বিভেদ নাই, আমরা সবাই সেই ধর্ষিতা যার নিরাপত্তা এই দেশের সরকার কোনকালেই দিতে পারেনি। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সৈরাচারকে বিদায় করেছি কিন্তু এর কয়েকমাস পরেই আমাদের জীবনের নিরাপত্তা ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তার জন্য আবার ও রাস্তায় নামতে হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এমনভাবে কথা বলেছেন যেন আইন শৃঙ্খলার কোন অবনতি হয়নি। জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশ আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে, রক্ত ঝরিয়েছে কিন্তু আজ সেই পুলিশ আমার কোন একজন বোনের নিরাপত্তা দিতে পারছেনা, তাহলে রাষ্ট্র এই সৈরাচার আমলের পুলিশ বাহিনী কেন রেখে দিয়েছে। আন্দোলন বিপ্লবের আঁতুরঘর জাহাঙ্গীরনগর থেকে আওয়াজ তুলে বলছি প্রত্যেকটি ধর্ষকের কালোহাতকে প্রতিহত করা হবে এই সিস্টেমকে জবাবদিহি করতে হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলেন, যত ধরনের ধর্ষণ হচ্ছে, যেখানে যেখানে নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে রাষ্ট্র যদি সেটার বিচার না করে, রাষ্ট্র যদি সেই জায়গায় হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে বাংলাদেশের নারীরা ফ্যাসিস্টকে হটানোর জন্য সামনের সারিতে যেভাবে লড়াই করেছে, তার সম্মান রক্ষার্থে, এই দেশের সম্মান রক্ষার্থে তারা কিন্তু আরেকবার সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে একদমই ভাববে না। সেই জায়গা থেকে আমরা বলে দিতে চাই, অবিলম্বে যে ধরনের হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করে আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত হাজির করতে হবে।
বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আহসান ইমাম বলেন, ছোট শিশু, গর্ভবতী, প্রতিবন্ধি নারী, বয়স্ক নারী কেও বাদ যাচ্ছেনা। আমাদের ক্রমাগত কথা বলতে হচ্ছে। কিন্তু আমি আর কথা বলতে পারছিনা কারণ আমার শরীরে আমার মনে আছিয়া বসে আছে। আছিয়ার অবস্থা অকল্পনীয়। এই বাংলাদেশ আমাদের কাম্য ছিলো না। শুধু একটি কথাই বলবো ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে। আমার মায়েরা, বোনেরা আর অনিরাপদ থাকবেনা। আর একটি ধর্ষণের ঘটনাও আমরা শুনতে চাইনা।
সমাবেশ শেষে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে ১০ টা ৫৫ থেকে ১১ টা ৩০ পর্যন্ত অবস্থান করেন তারা।
আরও পড়ুন: