
মব জাস্টিসের প্রতিবাদ ও শাহাবাগের জুডিশিয়াল কিলিং এর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
বুধবার রাত দুইটায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় সমবেত হয়ে মিছিলটি বের করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বটতলায় এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের, "শাহবাগী সন্ত্রাস করে, ইন্টেরিম কি করে", " ল তে লাকী, তুই হাসিনা তুই হাসিনা", "শাপলার শহীদদের ভুলি নাই ভুলবো না", "শাহবাগী রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়", স্লোগান দিতে শোনা যায়। মিছিল শেষে বটতলায় একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশে গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির, আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কয়েকজন নেতা-কর্মী বক্তব্য দেন।
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক শোয়াইব হাসান। এসময় তিনি বলেন, যখন রক্ত পিপাসু খুনিদের একটা মব এসেছিল, একটা পত্রিকা নিউজ করেছিল, শাহবাগে শুনি ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি। আজকে আবার সেই ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা যায়। এটা ২০১৩ না। যতদিন আমরা আছি এই বাংলাদেশের বুকে আরেকটা জুডিশিয়াল কিলিং, আরেকটা ডিহিউম্যানাইজেশনের প্রক্রিয়া আমরা শুরু করতে দিব না। তুই বাকশালের ছাত্রলীগ নিয়ে আয়, তুই শাহরীয়ার কবিররে নিয়ে আয়, তুই লাকিরে নিয়ে আয়, আরেকটা শাহাবাগ করতে হলে আমাদের রক্তের উপর দিয়ে করতে হবে। ২০১৩ সালের জুডিশিয়াল কিলিং এর বিচার, প্রাণ হারানো প্রত্যেকটা ভাইদের বিচার আমরা করব। কারা কারা অফিসিয়ালি জুডিশিয়াল কিলিং এর রাস্তা তৈরি করেছিল আমরা কিন্তু তাদের ভুলি নাই। যতদিন আমরা আছি ততদিন এ বাংলাদেশের মাটিতে আর কোন জুডিশিয়াল কিলিং, আর কোন ফ্যাসিবাদী মব, আর কোন ডিহিউম্যানাইজেশন করতে দিব না।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, আমরা জানি এই ফ্যাসিবাদের উত্থান হয়েছিল যেখান থেকে সে শাহবাগী আন্দোলন আবার জাগ্রত হয়েছে। এই ফ্যাসিবাদের উত্থান যে করেছিলো সে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লাকী আজকে রাজপথে স্লোগান দিয়ে বেড়াচ্ছে। যে লাকীর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের উত্থান হয়েছিল, সে লাকীকে অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। এই বাংলায় আমরা আর কখনো শাহবাগ কায়েম হতে দিব না। প্রয়োজনে আমরা রক্ত দিব, জীবন দিয়ে দিব তবুও আমরা আর এ শাপলা হত্যার মতো ঘটনা ঘটতে দিবো না। আজকে যে ধর্ষণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হয়েছিল, সেখানে দিল্লির প্রেসক্রিপশনে যে ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল সে ষড়যন্ত্র আমরা কায়েম হতে দিব না। দিল্লির প্রেসক্রিপশনে বাংলা চলবে না।
বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির জাবি শাখার প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক সাফায়েত মীর বলেন, ভারতীয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই শাহাবাগের উত্থান। এই শাহাবাগীর মাধ্যমে বিএনপির সাকা চৌধুরী,দেশপ্রেমিক কাদের মোল্লা, দেশ প্রেমিক মুজাহিদ এদেরকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। এই শাহাবাগীরা আমাদের ভাইদেরকে শাপলায় রক্তে রঞ্জিত করেছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর এরা সুধরাবে কিন্তু এরা সুধরায় নি। যেহেতু তারা সুধরায়নি তাদেরকে আমরা রাজপথে মোকাবেলা করবো। আমরা তাদেরকে হুশিয়ারি দিয়ে জানাতে চাই আমরা শহীদদের রেখে যাওয়া স্বপ্নকে ধারণ করবো, চব্বিশের অভ্যুত্থানকে ধারণ করে শাহাবাগীর বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান, লড়াই অব্যাহত থাকবে।
আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চের আহবায়ক আনজুম শাহরিয়ার বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে মব জাস্টিসের সুচনাকারী, জুডিসিয়াল কিলিং এর সূচনাকারী সেই লাকী আক্তাররা আবার স্বৈরাচারের ডাক দিচ্ছে। ২০২৫ এ এসে দেশে কেউ যদি আবার মব জাস্টিস কায়েম করতে চায়, জুডিশিয়াল কিলিং প্রতিষ্ঠা করতে চায়, ছাত্রজনতা কঠোর হস্তে তা দমন করবে। ইন্টেরিম সরকার যখন খুনি হাসিনা সহ সকল অপরাধীর একটা বিচারিক প্রক্রিয়ার দিকে আগাচ্ছে তখন একটা কুচক্রি মহল বিভিন্ন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিদেশী শক্তির মাধ্যমে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আজকে যে মব সৃষ্টি করা হয়েছে আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। শাহবাগে যে জুডিশিয়াল কিলিং এর সূচনা করা হয়েছিল, শাপলা চত্ত্বরে যে হাজারো ইসলামপ্রিয় মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল, ইন্টেরিম সরকারের কাছে এর বিচার দাবি করছি।
আরও পড়ুন: