শুক্রবার

৩১ জানুয়ারি, ২০২৫
১৭ মাঘ, ১৪৩১
,

"উত্তেজনা এবং রাজনীতি: ট্রাম্প ও কমলার সমর্থকদের আওয়াজ!"

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১ নভেম্বর, ২০২৪ ১৭:৩৮

আপডেট: ১ নভেম্বর, ২০২৪ ১৭:৫৮

শেয়ার

ছবি: সংগৃহীত

সারা বিশ্ব এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে নজর রেখেছে। আসন্ন ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোট, যেখানে আমেরিকানরা নির্বাচিত করবেন তাদের আগামী চার বছরের রাষ্ট্রনায়ককে। ডোনাল্ড ট্রাম্প কি দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসবেন, নাকি ডেমোক্রেটরা প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসকে নির্বাচিত করবেন? উত্তর জানার অপেক্ষায় সবাই।

বর্তমানে দুই প্রার্থীকে নিয়ে চলছে বিভিন্ন বিশ্লেষণ ও মতামত। মার্কিন সেলিব্রিটিরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সবসময় সেলিব্রিটিরা প্রভাবিত করে আসছেন এবং তাদের সমর্থন ভোটারদের মনোনয়ন ও জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষত, এইবার সেলিব্রেটিদের সমর্থন পূর্বের তুলনায় আরও বেশি প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভোটারের মনোভাব পরিবর্তন এবং পোলিং নম্বরগুলোর ওপর সেলিব্রিটির কণ্ঠস্বরের প্রভাব অত্যন্ত শক্তিশালী। চলুন দেখে নেই ট্রাম্প ও কমলার পক্ষে সমর্থন জানানো কিছু খ্যাতিমান তারকাদের নাম।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক তারকারা

এলন মাস্ক

টেসলা এবং স্পেসএক্সের সিইও এলন মাস্ক ট্রাম্পের দৃশ্যমান সমর্থক হিসেবে সামনে এসেছেন। তিনি বিভিন্ন সমাবেশে উপস্থিত থেকে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। রাজনীতিবিদরা মাস্কের সমর্থনকে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। মাস্ক ট্রাম্পের ক্যাম্পেইনে ১১৯ মিলিয়ন ডলার দান করেছেন এবং স্বাধীনতা ও অস্ত্র অধিকারের জন্য পিটিশনের সমর্থকদের প্রতি প্রতিদিন ১ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। জুলাই মাসে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে তাঁকে ‘থিওডোর রুজভেল্টের পর সবচেয়ে কঠিন প্রার্থী’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

জ্যাকারি লেভি

জনপ্রিয় 'শাজাম' সিনেমার তারকা অভিনেতা জ্যাকারি লেভি, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁর মতে, ট্রাম্প হলেন একমাত্র প্রার্থী যিনি 'আমেরিকা পুনরুদ্ধার' করতে সক্ষম। লেভি ট্রাম্পের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে নির্বাচনে তাঁর সমর্থন প্রকাশ করেছেন।

কিড রক

রক সঙ্গীতশিল্পী কিড রক ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন জোরালো সমর্থক। তিনি ট্রাম্পের সমাবেশে নিয়মিত উপস্থিত হন এবং রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলনে (RNC) গান গেয়ে উপস্থিত দর্শকদের ‘লড়াই কর, লড়াই কর’ স্লোগানে ট্রাম্পের পক্ষে উৎসাহিত করেছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একটি ব্যর্থ হত্যাচেষ্টার পর, কিড রক একটি ভিডিও পোস্ট করে ট্রাম্পের সমর্থকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘যদি তুমি ট্রাম্পের সঙ্গে কিছু করো, তাহলে তুমি আমার সঙ্গেও সেটা করছ।

হাল্ক হোগান

পূর্ববর্তী রেসলিং আইকন হাল্ক হোগান রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলনে ট্রাম্পের সমর্থনে যোগদান করেন। সেখানে তিনি উত্তেজিত ভঙ্গিতে তার শার্ট ছিঁড়ে ফেলেন এবং ঘোষণা করেন, ‘ট্রাম্প আবারও শাসন করুক’ হোগানের এই অভিনব সমর্থন সমাবেশে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনা সৃষ্টি করে।

অ্যাম্বার রোজ

মডেল ও র‌্যাপার অ্যাম্বার রোজও রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলনে ট্রাম্পের সমর্থনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন যে মিডিয়া ট্রাম্পকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে এবং বলেন, ‘অনেক দিন ধরে, আমি মিথ্যাগুলোতে বিশ্বাস করেছিলাম’। রোজ ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ও সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করেছেন, যা সমাবেশে উপস্থিত দর্শকদের মাঝে নজর কাড়ে।

ব্রেট ফাভ্রে

অবসরপ্রাপ্ত ফুটবল তারকা ব্রেট ফাভ্রে ২০২০ সাল থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক। সম্প্রতি তিনি আবারও ট্রাম্পের সমর্থন জানিয়েছেন। ফাভ্রে ট্রাম্পের ক্যাম্পেইনের একটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে উপস্থিত হয়ে আমেরিকানদের ‘একটি শক্তিশালী নেতা’ নির্বাচন করার জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি দাবি করেন, ট্রাম্প হলেন একজন নেতা যে পরিবারকে রক্ষা করে এবং বিশ্ব শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম।

কমলা হ্যারিসের সমর্থক তারকারা

বিয়ন্সে

হিউস্টনের একটি সমাবেশে কমলা হ্যারিসের সমর্থনে উপস্থিত হন হলিউডের সুপারস্টার বিয়ন্সে। তিনি ভোটারদের কাছে আবেদন করেন, ‘সেলিব্রিটি হিসেবে নয়, একজন মা হিসেবে আপনাদের কাছে কমলার জন্য ভোট চাই। কমলা এমন একটি পৃথিবী তৈরি করতে পারবেন যেখানে আমরা বিভক্ত নই।’ কেলি রোল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি কমলা হ্যারিসকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।

এমিনেম

র‌্যাপার এমিনেম দীর্ঘকাল ধরে ট্রাম্পের সমালোচক হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি তিনি কমলা হ্যারিসের প্রতি তার আকুণ্ঠ সমর্থন প্রকাশ করেছেন। একটি সমাবেশে গিয়ে তিনি যুব ভোটারদের কাছে কমলাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে একমঞ্চে ডেমোক্রেট প্রার্থীর জন্য প্রচারণায় অংশ নিয়েও তিনি সমর্থন জানিয়েছেন।

টেইলর সুইফট

এআই দ্বারা পরিবর্তিত একটি ছবির মাধ্যমে ট্রাম্পের সমর্থন দেয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর হলিউড মেগাস্টার টেইলর সুইফট তার রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার পছন্দের প্রার্থী হলেন ক্লিনটন, বুশ, ওবামা ও বাইডেনদের উত্তরসূরি কমলা হ্যারিস। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি বলেন, হ্যারিস অধিকার আদায়ের জন্য সবসময় লড়াই করছেন, এবং তিনি মনে করেন আমাদের নেতা হিসেবে তার মতো একজন চ্যাম্পিয়ন প্রয়োজন।

জর্জ ক্লুনী

ডেমোক্রেটদের একজন প্রধান ডোনার হিসেবে পরিচিত অভিনেতা জর্জ ক্লুনী কমলা হ্যারিসের প্রথম সমর্থক ছিলেন। তিনি বাইডেনকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে হ্যারিসের সমর্থনে কথা বলেছেন। সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি হ্যারিসের প্রার্থী হওয়াকে ‘ঐতিহাসিক অভিযান’ বলে উল্লেখ করেন এবং একজন নেতা হিসেবে তার প্রতি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

ফিনিয়াস

গায়িকা বিলি আইলিশ এবং ফিনিয়াস একসঙ্গে কমলা হ্যারিসের সমর্থন জানিয়েছেন। ভক্তদের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, ‘আপনাদের জীবন নির্ভর করছে, তাই ভোট দিন।’ কামালার পক্ষে ভোট চেয়ে, গর্ভপাতের স্বাধীনতা, গ্রহের শান্তি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতির জন্য নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন তারা।

লিজো

ডিট্রয়েটে জন্ম নেয়া র‌্যাপার লিজো কমলা হ্যারিসের সঙ্গে একটি সমাবেশে অংশ নেন এবং ট্রাম্পকে ডিট্রয়েটকে জন্য ‘একটি গণ্ডগোল’ বলে সমালোচনা করেন। লিজো বলেন, কমলা হ্যারিস একজন শক্তিশালী নারী নেতা হিসেবে পৃথিবীকে শান্তির পথ দেখাবেন।

এছাড়া, গায়ক জন লিজেন্ড, অভিনেত্রী সিন্থিয়া নিক্সন, মেরিল স্ট্রিপ, জেনিফার লোপেজ, মিন্ডি কালিং, রক ব্যান্ড ফু ফাইটার্স এবং ব্রুস স্প্রিংস্টিনও কমলা হ্যারিসের সমর্থনে দাঁড়িয়েছেন। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে তাদের সমর্থন প্রকাশ করছেন, কেউ সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন, কেউ আবার গান গাইছেন।

নির্বাচনের দিন নিকটবর্তী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচারণা শুধু রাজনৈতিক নেতাদের জন্য নয়, সেলিব্রিটিদের জন্যও একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তারা নিজেদের প্রভাব ব্যবহার করে ভোটারদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করছেন। লক্ষ লক্ষ অনুসারী ও ভক্তদের কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করছে তারা। বিনোদনের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে তারকারা তাদের পছন্দের প্রার্থীর জন্য নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরছেন। এটা একদিকে বিভাজনের ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে রাজনীতির ময়দানে একটি সাংস্কৃতিক মুহূর্তেরও সৃষ্টি করেছে।