বুধবার

২৭ নভেম্বর, ২০২৪
১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
২৫ জামাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

জন্মশতবর্ষে মুনীর চৌধুরী: সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অমর অবদান

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:৩২

আপডেট: ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:৪৪

শেয়ার

জন্মশতবর্ষে মুনীর চৌধুরী: সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অমর অবদান
মুনীর চৌধুরী। ফাইল ছবি

আজ শিক্ষাবিদ, লেখক, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক ও ভাষাবিজ্ঞানী মুনীর চৌধুরীর জন্মদিন। বেঁচে থাকলে আজ তিনি পেরতেন ১০০ বছর। স্বাধীনতাযুদ্ধের শেষের দিকে পাক বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন এই নন্দিত নাট্যকার ও বুদ্ধিজীবী। মুনীর চৌধুরী ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি নাট্যকার, শিক্ষাবিদ এবং সাহিত্য সমালোচক, যাঁর অবদান বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অমূল্য অংশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত মুনীর চৌধুরীর বিখ্যাত নাটক‘কবর’ ছিল পূর্ববাংলার প্রথম প্রতিবাদী নাটক। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে যে কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন দৃঢ় অবস্থানে এবং সোচ্চার। 

মুনীর চৌধুরী ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন, এবং তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল নোয়াখালীর চাটখিলে।

মুনীর চৌধুরী ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর পিতা খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। পিতা-মাতার ১৪ সন্তানের মধ্যে মুনীর চৌধুরী ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৪১ সালে মুনীর চৌধুরী ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।

মুনীর চৌধুরী পরবর্তীতে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে বিএ অনার্স ও এমএ পাস করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এবং ১৯৫৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। 

তিনি ১৯৪৭-৫০ সালে খুলনার ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন, এরপর ১৯৫০ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে যোগ দেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও বাংলা বিভাগে (১৯৫০-৭১) অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৯ সালে বামপন্থি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে প্রথমবার গ্রেপ্তার হন এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য বায়ান্নতে আবারও কারাবন্দি হন।

১৯৫৩ সালে, মুনীর চৌধুরী তার বিখ্যাত নাটক কবর রচনা করেন, যা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায় লেখা হয়েছিল। নাটকটি ১৭ জানুয়ারি ১৯৫৩ সালে রচিত হয়, তখন তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দি ছিলেন। 

মুনীর চৌধুরী ১৯৬৫ সালে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বাংলা টাইপরাইটারের জন্য উন্নতমানের কিবোর্ড উদ্ভাবন করেন, যা আজও মুনীর অপটিমা নামে পরিচিত। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে রক্তাক্ত প্রান্তর, চিঠি, দণ্ডকারণ্য, পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য নাটক। রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের জন্য তিনি ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। 

মুনীর চৌধুরী ১৯৭১ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। তার কিশোর ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে যায়। এই সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে মে-জুন মাসে এবং জুলাই থেকে কলা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুনীর চৌধুরীকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী আলবদর বাহিনী তার বাবার বাড়ি থেকে অপহরণ করে, এবং সম্ভবত ওইদিনই তাকে হত্যা করা হয়। 

জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী তার অগ্রজ এবং জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার তার অনুজা। ঢাকার থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠী মুনীর চৌধুরীর স্মরণে ‘মুনীর চৌধুরী সম্মাননা পদক প্রবর্তন করেছে।