বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বৃহৎ পরিসরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট এক্সপো-২০২৫ শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের সম্মানিত আহ্বায়ক জাকির হোসেন নয়ন, বিপিএইচসিডিওএর মহাসচিব ডা. মইনুল আহসান।
প্রধান অতিথির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেসি সেক্টরটি খুবই জটিল। ডায়াগনস্টিক ও চিকিৎসাসেবার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে মেডিকেল ইন্সপেক্টর থাকতে হবে। ডায়াগনস্টিকের ক্ষেত্রে একই মেশিন বেসরকারি ও সরকারি ক্ষেত্রে একরকম হয় না। বাংলাদেশের সবকিছুর দাম যদি জানা যায় তাহলে কেন যন্ত্রপাতির দাম জানা যাবে না?
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালগুলোতে যেন ফার্মেসি থাকে। সেটা যেন ওষুধের দোকান হয়ে না ওঠে। লিকুইড ডিসপোজাল গাফিলতি কেন হচ্ছে সেটা দেখা উচিত।
সায়েদুর রহমান বলেন, সব ধরনের রেইডে স্বাস্থ্য ইন্সপেক্টর থাকা উচিত। সঙ্গে রেফারেল সিস্টেম ঠিক করা উচিত। একজন ডাক্তার দিনে ১০০ রোগী দেখবে, এটা যেমন ঠিক নয়, আবার রোগীরাও এতে মাইন্ড করে। এখানে ইন্টারকারেকশন ঠিক করে নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে একটা বড় প্রশ্ন উঠেছে। এখানে যারা গাড়ি চালান তারা কতটুকু প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত? তারা ঠিকঠাক সেবা দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন কি না সেটা জানতে হবে। চিকিৎসার শুরুটাই হয় অ্যাম্বুলেন্স সেবার মাধ্যমে। নয়তো এটা কেবল একটা মাইক্রোবাস হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবাকে ডিসেন্ট্রালাইজড করার বিষয় তিনি বলেন, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো সেন্ট্রালাইজড হয়ে গেছে। ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতাল রয়েছে ভালো সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নীলফামারী, ঠাকুরগাঁওয়ের কোনো রোগী হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করলো, তাকে সিপিআর দিয়ে বাঁচানো হলেও ঢাকা পর্যন্ত আসতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তাই ভালো চিকিৎসার জন্য অবশ্যই জেলা শহরগুলোতেও চিকিৎসা সেবার মান ভালো করতে হবে। তাই চিকিৎসাসেবারকে সারাদেশেই ডিসেন্ট্রালাইজড করতে হবে।
সরকারি বেসরকারি এবং বিশেষায়িত হাসপাতাল নিয়ে প্রধান অতিথি বলেন, আবার বিশেষায়িত হাসপাতাল যেমন ক্যানসার হাসপাতালের সঙ্গে অন্যান্য হাসপাতালের একটা পার্থক্য থাকবে। এগুলোতে আইনি রিফ্লেকশন থাকা দরকার এবং যখন ভিজিট করবে তখনও রিফ্লেকশন যেন দেখা যায়। উন্নত দেশসহ আশেপাশের দেশগুলোতে এমন নিয়ম আছে। এই ডিটেইল কাজগুলো যেন হয় এজন্য অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল থাকা জরুরি। মেডিকেল কলেজ নিয়ে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল ইতোমধ্যে কাজ করছে। তারা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্বিশেষে মেডিকেল কলেজ করার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। আমিও পার্সোনালি মনে করি এখানে সরকারি-বেসরকারি হওয়া উচিত না। এটা আমি মনে করি আইনিভাবে প্রক্রিয়ায় আনা দরকার।
এই মেলায় চীন, জাপান, পাকিস্তান, ভারত, কোরিয়া ও বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় দুই শতাধিক মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট প্রস্তুতকারক কোম্পানি তাদের পণ্য প্রদর্শন করেন।
জানা যায়, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে মাথাপিছু খরচ দাঁড়াবে আনুমানিক ৬০ ডলার। যা ২০২০ সালের তুলনায় ১৭.৬৫% বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত দুই দশকে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ ঘটেছে। নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ১,১২৫ থেকে ৪,৪৫২ এ পৌঁছেছে। ক্লিনিকগুলোর সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪১১ থেকে বেড়ে ১,৩৯৭, ডেন্টাল ক্লিনিকগুলোতে প্রায় সাতগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১২২ থেকে ৮৩৯ টি হয়েছে। অন্যদিকে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, ১,৭৭৮ থেকে বেড়ে ১০,২৯১টি হয়েছে।
এছাড়াও প্রতিবছর চিকিৎসা ব্যায় আনুপাতিক হারে বাড়ছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় ছিল ৫১ ডলার, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৬.২৯% বেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় ছিল ৪৮ ডলার, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ৬.৫৩% বেশি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় ছিল ৪৫ ডলার, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৫.৮৪% বেশি। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় ছিল ৪২ ডলার, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ৬.৮৭% বেশি। প্রতিবছর এভাবেই স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় বাড়ছে।
এই মেলায় সেমিনার এবং নির্মাতাদের সঙ্গে সরাসরি ব্যবসায়ী থেকে ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ী থেকে কাস্টমার যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে অংশগ্রহণকারীরা ডায়াগনস্টিক চিকিৎসা সরঞ্জাম খাতে আধুনিক প্রযুক্তি ও এর ব্যবহার এবং নবনির্মিত প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারবেন, সঙ্গে বাজার সম্ভাবনাও প্রসারিত হবে।
আয়োজকদের তথ্যমতে, ঢাকা আন্তর্জাতিক ডায়াগনস্টিক মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট এক্সপো- ২০২৫ হলো সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি, সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ডায়াগনস্টিক মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট সেক্টরের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। এটি স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং প্রযুক্তিতে উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নেওয়ার যাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
এই মেলা আগামী ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলমান থাকবে।