banglaedition.com
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১১:৩১
বন্ধ চিনিকল চালুর খবরে খুশী কুষ্টিয়ার মানুষ 
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

বন্ধ চিনিকল চালুর খবরে খুশী কুষ্টিয়ার মানুষ 

কুষ্টিয়া সুগার মিল। ছবি: সংগৃহীত

চার বছর বন্ধ থাকার পর কুষ্টিয়া সুগার মিল পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অদক্ষ অব্যবস্থাপনা, অযত্ন ও অবহেলায় কুষ্টিয়া সুগার মিলে চার মৌসুম ধরে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির পাশাপাশি নানা সমস্যার মুখে অর্ধশতাব্দী বয়সী এই সুগার মিল।

ফলে নষ্টের পথে মিলের ভারী মেশিনারিজ-বৈদ্যুতিক মোটরসহ শতকোটি টাকার স্থাপনা। এদিকে চার বছর মিল বন্ধ থাকায় বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। মিল চালুর খবরে খুশী কুষ্টিয়ার মানুষ।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীন ৬টি (পঞ্চগড়, রংপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, সেতাবগঞ্জ ও শ্যামপুর) চিনিকলের আখ মাড়াইয়ের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে।  

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মাড়াই স্থগিতকৃত চিনিকল সমূহ পুনরায় চালু করার জন্য ও চিনিকল লাভজনকভাবে চালানোর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা প্রণয়নের লক্ষে গঠিত টাক্সফোর্সের সুপারিশ ও মতামতের আলোকে ০৩/১২/২০২৪ তারিখে স্মারক মূলে পর্যাপ্ত আখ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ১ম পর্যায়ে শ্যামপুর, সেতাবগঞ্জ চিনিকল, ২য় পর্যায়ে পঞ্চগড় ও পাবনা চিনিকল এবং ৩য় পর্যায়ে কুষ্টিয়া ও রংপুর চিনিকলের মাড়াই কার্যক্রম পুনরায় চালুকরণের লক্ষ্যে উপর্যুক্ত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।

এর আগে মিল বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারসহ চিনিকলটি পুনরায় চালুর দাবিতে মিলগেটে কয়েক দফা বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন শ্রমিক-কর্মচারীরা এবং বিভিন্ন সংগঠন।

জানা গেছে, লোকসানের মুখে ২০২০ সালের নভেম্বরে কুষ্টিয়া সুগার মিলের উৎপাদন ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটির দিকে নজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কারখানা ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো হয়ে পড়েছে নড়বড়ে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো মেরামতে অর্থ বরাদ্দ দেয়নি চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন। টানা কয়েক মৌসুম বন্ধ থাকায় চিনিকলটির অভ্যন্তরে বিরাজ করছে ভূতুড়ে পরিবেশ ও সুনসান নীরবতা। এককালের জৌলুসপূর্ণ এই মিলে এখন নেই কর্মব্যস্ততা ও প্রাণের কলরব। সব মিলিয়ে এক সময়ের নামকরা এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি যেন এখন শুধুই ধ্বংসস্তূপে রূপলাভের অপেক্ষার প্রহর গুনছে।

কুষ্টিয়া চিনিকলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি সুপারিশপত্রে চিনি উৎপাদন, আখের জমি হ্রাসকরণ, মিলের ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতা, লোকসান ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ঊর্ধ্বগামী হওয়ায় দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে কুষ্টিয়া চিনিকলসহ ছয়টি চিনিকলে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে আখ মাড়াই মৌসুমে উৎপাদন স্থগিত করা হয়। 

জানা গেছে, প্রতি মৌসুমে চিনি উৎপাদন অব্যাহত থাকলেও এ মিলে লাভের চেয়ে লোকসানই হচ্ছে বেশি। তবে ১৯৯৪-৯৫ অর্থ বছরে ২ কোটি ৬১ লাখ ও ৯৫-৯৬ অর্থ বছরে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা মিলে লাভ হয়। এছাড়া বিগত ২০০১-২০০২ থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছর পর্যন্ত গত ১৯ বছরের হিসাবমতে লোকাসন হয়েছে ৪১৫ কোটি টাকা। চালুর প্রথমদিকে মিলটি লাভজনক হলেও পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, অনিয়ম-দুর্নীতি ও মাথাভারী প্রশাসনসহ নানা কারণে  ক্রমাগত লোকসানের ঊর্ধ্বগতিতে মিলটি এখন অতি রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ফলে লোকসানের বিশাল বোঝা মাথায় নিয়ে কৃষিভিত্তিক একমাত্র এ প্রতিষ্ঠানটি পড়ে চরম হুমকিতে। মিল বন্ধ থাকায় আখ উৎপাদন মারাত্মক হ্রাস পেয়েছে। তবে কুষ্টিয়া জোনের আওতায় চাষ করা আখ মোবারকগঞ্জ, ফরিদপুর ও দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোং চিনিকলে সরবরাহ করছেন চাষিরা।

মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কুষ্টিয়ার সুশীল সমাজের মানুষ বলেন, ২০২০ সালে লোকসান ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ঊর্ধ্বগামী হওয়ায় আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। মিলটি চালুর সিদ্ধান্তের ফলে সম্ভাবনাময় এ মিলটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমরা খুশী। মিলটি দ্রুত আধুনিকরণসহ মিলটিকে রক্ষায় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।