শনিবার

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
১০ ফাল্গুন, ১৪৩১
২৩ শা’বান, ১৪৪৬

জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম: প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ২১:২৬

শেয়ার

জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম: প্রধান উপদেষ্টা
ছবি: সংগৃহীত

জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক প্রদান অনুষ্ঠানের এ কথা বলেন তিনি।

তপ্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা, এই আন্দোলন বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য সূচিত হলেও এর মূল চেতনাটি ছিল স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তা ছিল বাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলন, তাই বাঙালির কাছে একুশ মানে মাথানত না করার দৃঢ় প্রত্যয়। বায়ান্ন’র একুশে ফেব্রুয়ারি তাই শুধু বেদনার্ত অতীতকে স্মরণ করে অশ্রুবিসর্জনের দিন নয়, বরং এক অবিনাশী প্রেরণা, সকল ধরনের অন্যায়, অবিচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর বীজমন্ত্র।’   

তিনি বলেন, ‘বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি এনে দিতে আমাদের আত্মত্যাগ করতে হয়েছে অনেক। মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সকল জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মাতৃভাষার চেতনা ও মর্যাদা রক্ষার প্রেরণা ও এ চেতনার সাথে প্রাতিষ্ঠানিকতার সূত্রে ২০০১ সালের ১৫ই মার্চ ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। বিশ্বের সকল মাতৃভাষার সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও গবেষণার ইতিবৃত্তকে লক্ষ্য করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট তার যাত্রা শুরু করে। মাতৃভাষা যে কোনো নৃগোষ্ঠীর ইতিহাস, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বাহক। মাতৃভাষার সঙ্গে সকল মানুষের আত্মার সম্পর্ক। মাতৃভাষার পর মানুষ যত ভাষাই আত্মস্থ করুক না কেনো, সেসব নতুন ভাষায় যতই পারদর্শিতা অর্জনই করুক না কেনো, মাতৃভাষাকে তার হৃদয়ের গভীরতা থেকে সরাতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে নানা দেশের নানা ভাষার কিংবা হাতে গোনা কয়েকটি দেশের কিছু মানুষ নাগরিকত্ব গ্রহণ করে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করেন। নতুন দেশের ভাষা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ২৪ ঘণ্টার ভাষায় পরিণত হয়ে যায়, কিন্তু তবু সে ভাষা মাতৃভাষায় পরিণত হয় না। তারা নিজেদের মধ্যে একত্র হলেই উৎসাহ সহকারে নিজেদের মূল ভাষায় ফিরে যায়, তাদের মূল ভাষার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল সৃষ্টি করে নেয় নিজেদের অজান্তেই।’  

এবারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদক পেয়েছে তিন দেশি-বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও বিকাশে ভূমিকা রাখায় পদক পান ভাষাবিজ্ঞানী ও ভাষা গবেষক অধ্যাপক আবুল মনসুর মুহম্মদ আবু মুসা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জীবনানন্দ দাশের রচনাবলি অনুবাদ এবং বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণ ও প্রসারে ভূমিকা রাখার জন্য পদক পান ইংল্যান্ডের কবি, লেখক ও অনুবাদক জোসেফ ডেভিড উইনটার এবং মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে ইউনেসকো কর্তৃক ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রদানে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করায় প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পায় প্যারিস অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।

অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের পদক হিসেবে একটি স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র ও প্রাইজমানি প্রদান করা হয়।