সোমবার

৩১ মার্চ, ২০২৫
১৭ চৈত্র, ১৪৩১
,

ধানমন্ডিতে ডাকাতির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬ জন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ, ২০২৫ ১৬:০৮

শেয়ার

ধানমন্ডিতে ডাকাতির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬ জন গ্রেফতার
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কে ভিকারুননিসা স্কুলের গলিতে ছয়তলা একটি ভবনে বুধবার ভোরে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। র‍্যাব পরিচয়ে একদল ব্যক্তি নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে ও বেঁধে রেখে ভবনের গয়নার দোকান ও কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে প্রায় সাড়ে ৩৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করেছে। একপর্যায়ে তাঁরা পুলিশের ওপরও হামলা চালান।

ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন ফরহাদ বীন মোশারফ, ইয়াছিন হাসান, মোবাশ্বের আহাম্মেদ, ওয়াকিল মাহমুদ। পরে আজ বৃহস্পতিবার আবদুল্লাহ ও সুমন নামে আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে কয়েকজন পুলিশকে মারধর করে পালিয়ে গেছেন।

গ্রেফতার ব্যক্তিদের তিনজন শিক্ষার্থী বলে পুলিশ জানিয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করেন। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

পুলিশ ডাকাতিতে ব্যবহৃত র‍্যাব লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র‍্যাব লেখা ক্যাপ, একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মুঠোফোন, একটি লোহার ছেনি, একটি পুরোনো লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ জব্দ করেছে।

আজ মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশ, ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, ছয়তলা বাড়িটি এম এ হান্নান আজাদ নামের এক ব্যক্তির। বাড়িটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে তাঁর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে।

ওই বাড়িতে ‘অলংকার নিকেতন’ জুয়েলার্স নামে তার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। বাড়ির নিচতলায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস আছে। এ ছাড়া ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস রয়েছে। গতকাল ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেট কারে ডাকাত দল ওই বাড়ির সামনে আসে। তাঁরা প্রধান ফটকে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীদের র‍্যাবের লোক পরিচয় দেন। তাঁদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে বলে

পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ আলম বলেন, ‘অভিযান চালানোর কথা বলে নিরাপত্তাকর্মীদের বাড়ির প্রধান ফটক খুলে দিতে বলা হয়। তাদের কয়েকজনের গায়ে র্যাব লেখা জ্যাকেট পরা ছিল। এ সময় কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মী তাঁদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। তখন ডাকাতেরা নিরাপত্তাকর্মীদের গালিগালাজ করেন। বাড়ির ফটক না খুললে হত্যার হুমকি দেন। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন জোর করে ফটক খুলে ফেলেন। এরপর তারা বাড়ির ভেতরে ঢুকে নিরাপত্তাকর্মী, বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ও গাড়ি চালককে দড়ি দিয়ে বেধে ফেলেন। নিচতলার অফিসের গেট ভেঙে সেখানের পিয়নকে মারধর করেন এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছে থাকা নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেন। এরপর ডাকাতেরা তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে ফেলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ সময় গেট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিনজন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসেন। ডাকাতেরা তখন তাদের আটক করে মারধর করে অফিসের চাবি ও বাসার চাবি দিতে বলেন। একপর্যায়ে তারা জোর করে অফিস সহকারীদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢোকেন এবং অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে নেয় ও অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। এ সময় ডাকাতদের আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে কানের দুল ও চেইনসহ আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ দেড় লাখ টাকা নেয়। তারা এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নিয়ে গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করে।’

মাসুদ আলম বলেন, ‘খবর পেয়ে ধানমন্ডি থানার একটি টহল দল ওই বাড়িতে যান। এম এ হান্নানকে পুলিশ উদ্ধার করে। এ সময় ডাকাতরা ছেনি ও রেঞ্জ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। তখন আশপাশে থাকা লোকজনের সহায়তায় পুলিশ ডাকাত দলের সদস্য ফরহাদ বীন মোশারফ, ইয়াছিন হাসান, মোবাশ্বের আহাম্মেদ ও ওয়াকিল মাহমুদকে গ্রেফতার করে।’

এ ঘটনায় গ্রেফতার ও পালিয়ে যাওয়া আটজন ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। আজ ভোরে হাজারীবাগ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির ঘটনায় আবদুল্লাহ ও সুমনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

banner close
banner close