
গণতান্ত্রিক দেশে, যেকোনো ন্যায্য আন্দোলন করা একটি রাজনৈতিক দলের অধিকার। অথচ, বিগত বছরগুলোতে বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করা, জামায়াত-বিএনপির ওপর এভাবেই দমন-পীড়নের হুকুম দিয়েছেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।
দেশটাকে যে নিজের বাবার সম্পত্তি মনে করতেন, তা শেখ হাসিনার অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছে বারবার। কারো কাছে মাথা নত করেন না, হাসিনার এমন বক্তব্য দেশটাকে নিজের বাবার মনে করার আরেকটা প্রমাণমাত্র।
বিস্তারিত : https://www.youtube.com/watch?v=4EzWSjul5uE
আর বাংলাদেশকে শেখ মুজিবের সম্পত্তি মনে করার কারণেই, বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর অস্বাভাবিক দমন-পীড়ন চালিয়ে, একেবারে পঙ্গু করে ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও, হাসিনার রোষানলের অন্যতম শিকার। সাজানো মামলা, আর নিজের অবৈধ ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে প্রবীণ নেত্রী হওয়া স্বত্তেও খালেদা জিয়াকে অমানবিকভাবে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। জেলে বসে মেকআপ নিবেন খালেদা জিয়া, এমন কথা বলে তাকে ব্যঙ্গও করেছেন হাসিনা।
গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার চিকিৎসার আবেদনকেও আহ্লাদ বলে বিদ্রূপ করেছেন শেখ হাসিনা।
একইভাবে, বিগতদিনে বহুবার খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন শেখ হাসিনা।
সাজানো মামলায় ফাঁসিয়ে তারেক রহমানকে নিজেই দেশে ঢুকতে না পারার ব্যবস্থা করলেও, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কেন দেশের বাইরে? সেটি বলে নাটক করেন শেখ হাসিনা। গত পাঁচ আগস্ট তার পতনের পর দেশের দায়িত্ব পালন করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারা ক্ষমতায় আসার পর, হাসিনার সাজানো বিভিন্ন মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান। একটা নিরপেক্ষ সরকারের আমলে, খালেদা ও তারেক মামলা থেকে খালাস পাওয়ায়, হাসিনার সাজানো মামলা যে মিথ্যা ছিলো, সেটি প্রমাণ হয়েছে আরেকবার।
বিরোধীদল এবং নেতাদের পাশাপাশি, হাসিনা দমন করেছেন ভিন্নমতের সবাইকে। যখন যাকে বাঁধা মনে করেছেন, সরাসরি স্ট্রিমরোলার চালিয়েছেন সবার ওপর। ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের ওপর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালানো তার একটি দৃষ্টান্ত। যৌক্তিক ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালের ৫-মে শাপলা চত্ত্বরে বিক্ষোভ করায়, অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে শেখ হাসিনা। হত্যার পর, মৃতদেহগুলো সিটি করপোরেশনের গাড়িতে নিয়ে গুম করার ব্যবস্থাও করেন এই সাইকো।
সেইসঙ্গে, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারীর পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডও ছিলেন শেখ হাসিনা। অনেক অফিসারদের হত্যা করা হয় তার নির্দেশেই। পরে, বহু বিডিআর সদস্যদেরও কারাদণ্ড দেয়া হয় পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায়। আর এ-সব কিছুরই পরিকল্পনা ও নির্দেশদাতা এক ব্যক্তি- শেখ হাসিনা।
যুদ্ধাপরাধের নামে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ অসংখ্য আলেমকে হত্যা করার মূল কারিগরও শেখ হাসিনা।
হাসিনার পতনের পর, তার তৈরি আয়নাঘরের প্রসঙ্গ সামনে আসে ব্যাপকভাবে। অতীতে, আলেম-ওলামাসহ ভিন্নমতের অসংখ্য মানুষকে বন্দী করে নির্যাতন করা হতো সেখানে।
একইভাবে, আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে তার সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেও, জঙ্গী নাটক সাজাতেন শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে, তার রোষাণলে পড়তেন দেশের আলেমশ্রেণী।
আলেমশ্রেণী ছাড়াও, ভিন্নমতের যখন যাকে পেরেছেন, আইন বহির্ভূতভাবে তাকেই আটক কিংবা গুম করার ব্যবস্থা করতেন শেখ হাসিনা। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী তাদের একজন।
এসবের পাশাপাশি লুটপাট, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে সারাদেশের বেশিরভাগ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা।
নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত দামে দেশের সাধারণ মানুষের যখন না খেয়ে থাকার মতো অবস্থা, তখন সিণ্ডিকেট না ভেঙে হাস্যোকর সব মন্তব্য করে পৈশাচিক আনন্দ নিয়েছেন শেখ হাসিনা। কাঠালের বার্গার, কাঠালের কাবাবসহ নানা রেসিপির কথা বলে, মধ্যবিত্তের সঙ্গে তামাশা করেছেন তিনি।
এছাড়া, ২৪-এর আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে মিথ্যাচার করে, এমনসব বক্তব্য দিয়েছেন শেখ হাসিনা, যা দেখে সাধারণ মানুষ সবসময়ই প্রশ্ন তুলেছেন, একজন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কখনোই এমন রুচিহীন হতে পারে না, এমন জঘন্য হতে পারে না।
বিগত দীর্ঘ ১৫/১৬ বছরে আওয়ামী লীগকে একটা দানব সরকারে পরিণত করেন শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে, হাসিনা যেমন দোষী, একইভাবে সহকর্মী হওয়ায় তার দলের প্রতিটা পদধারী নেতাকর্মীও নির্দোষী নয়। হাসিনার পাপের সবশেষ এবং সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিসেবে ধরা হয় ২৪ এর আন্দোলনে তার চালানো গণহত্যাকে। নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যার নির্দেশ দেন হাসিনা। আর সেসব পালনে মাঠপর্যায়ে বেশ ভালোভাবেই ভূমিকা পালন করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে, নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে টিকতে পারেননি হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ। দেশে ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন হাসিনা। আর দেশ ও দেশের বাইরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
তবে, পালিয়ে বেড়ালেও ষড়যন্ত্র থামিয়ে রাখেনি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা। ভারত থেকে নানা সময়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্যসহ, বিভিন্ন মিথ্যাচার করে যাচ্ছে হাসিনা। আর, গুপ্ত অবস্থায় থাকলেও সেসব বাস্তবায়নের প্রতিশ্রতি দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীরা। সাম্প্রতিক সময়ে, ফাঁস হওয়া একাধিক কল রেকর্ড থেকে বোঝা যাচ্ছে এমন চিত্র। যেখানে, দুইশোর বেশি মানুষকে সরাসরি হত্যার নির্দেশ দিচ্ছেন শেখ হাসিনা।
হাজার হাজার মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারকেও হাস্যোকরভাবে অবৈধ বলে যাচ্ছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ। তবে, মাথামুণ্ডহীনভাবে বিপ্লবের পর গঠিত সরকারকে অবৈধ বললেও, গণহত্যার দায় শিকার করে এখন পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি হাসিনা ও তার দল। কোনো ধরনের অনুতপ্তও হয়নি কখনো। এই অবস্থায় রিফাইন্ড বা বিকল্প আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ সামনে আসছে কেন? তারা কি দল হিসেবে মাফ চেয়েছে? তাহলে কারা তাদের পুনর্বাসনের বিষয় সামনে নিয়ে আসছে? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন জনপ্রিয় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইলিয়াছ হোসাইন।
শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের পুর্নবাসনের জন্য বেশকিছু সাংবাদিক সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন বর্তমানে। জিল্লুর রহমান, মাসুদ কামাল, নাজমুল আশরাফ তাদের মধ্যে অন্যতম।
সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি হামলার কথা তুলে ধরেন সাংবাদিক জিল্লুর রহমান। তার এই বক্তব্য জঙ্গি নাটকবাজ আওয়ামী লীগ বড় সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে ধারণা করছেন দেশের সচেতন মহল।
গণহত্যা চালিয়ে দল হিসেবে সক্রিয় রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই অবস্থায় দেশের বেশিরভাগ মানুষ, আওয়ামী লীগের ব্যানারে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন সাংবাদিক নাজমুল আশরাফ। এক্ষেত্রে তিনি, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের ধারনা দিলেও, আওয়ামী লীগের কোনো অংশই এখনো নিজেদের জায়গা থেকে রিফাইন্ডের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়নি। যারা নিজেরাই স্বচ্ছভাবে ফেরত আসার ঘোষণা দেয়নি, তাদের অন্যরা কোন যুক্তিতে ফেরত নিয়ে আসতে চায়? এমন প্রশ্ন ঘুরছে চারপাশে।
প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে ব্যাপক জনস্রোতের বিরুদ্ধে যেয়ে বিগত বছরগুলোতে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেছিলো ভারত। তবে, ধারণা করা হয় হাসিনার মানসিক বিকারগ্রস্ত কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো প্রতিবেশি দেশটি। ফলে তারাও, বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় বসবে? ভাবতে শুরু করে সেই বিকল্প। এই অবস্থায়, যারা রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের কথা বলছেন? তারা আরেকবার ষড়যন্ত্রের সুযোগ করে দিচ্ছেন ভারত ও শেখ হাসিনাকে। তাই, হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পাশাপাশি রিফাইন্ড চাওয়া আওয়ামী লীগার সাংবাদিক ও সমর্থকদেরও বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর দাবি সাধারণ মানুষের।
আরও পড়ুন: