
রাজধানী ঢাকার অন্যতম একটি বড় সমস্যা যানজট। প্রতিবছর দুই ঈদের আগে স্বাভাবিক সেই যানজট বেড়ে হয়ে যায় কয়েক গুন বেশি। তবে রাজধানীতে গত ১৫ বছরের সেই চিরচেনা তীব্র যানজট ছিলনা ২০২৫ সালের রমজান ও ঈদযাত্রয়।
গত ১৫ বছর ধরে ‘ঈদুল ফিতর’ ও ‘ঈদুল আযহা’র আগে রাজধানী থেকে নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষদের মুখোমুখী হতে হয়েছে অসহনীয় যানযটের। সেই সাথে বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন এবং লঞ্চঘাট সবখানেই দালাল সিন্ডিকেটের হয়রানী, পরিবহন মালিকদের বাড়তি ভাড়া আদায়, চাঁদাবাজি,ছিনতাইয়ের ভয় উপেক্ষা করে ঘরে ফিরতে হয়েছে ঈদ উদযাপন করতে।
২০২৫’এর রমজান মাসে ঈদযাত্রায় রাজধানী ঢাকায় দেখা মেলেনি গত ১৫ বছরের সেই তীব্র যানজটের। রাজধানীতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবছর ঈদের আগে যানজট ছিল একেবারে কম। বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, লঞ্চঘাট সবখানে প্রশাসনের নজরদারির মাধ্যমে ন্যায্য ভাড়ায় যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও যানজট ছাড়াই স্বস্তির সাথে ঢাকা থেকে ঈদ উদযাপন করতে যাত্রা করতে পেরেছে ঘরমুখো সাধারণ মানুষ।
বিগত বছরগুলোর রেলযাত্রার চিত্র এটি। পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরমুখী মানুষদের উপচে পড়া ভীড় ট্রেনের ছাদে। এছাড়াও ট্রেনের ইঞ্জিনে ঝুলেও গন্তব্যে ফিরতে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের।
ট্রেন ছাড়াও রাজধানীর গাবতলী,মহাখালী,যাত্রাবাড়ি বাস টার্মিনালগুলোতেও টিকিট সিন্ডিকেট করায় ঘরে ফেরা মানুষের ভীড়ে তিল ধরানোর জায়গা থাকতো না। টিকিট সিন্ডিকেট ছাড়াও দুই ঈদের আগে এসব এলাকায় বেড়ে যেত চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা। বিগত বছরগুলোতে বাস ও ট্রেনে টিকিট না পেয়ে পণ্যবাহী ট্রাকে করেও গন্তব্যে যেতে দেখা গিয়েছে সাধারন মানুষদের।
পরিবারের কাছে ফিরতে ঢাকার অভ্যন্তরেও সাধারণ মানুষকে তীব্র যানজটের মুখোমুখি হতে হয়েছে বিগত বছরগুলোতে।
তবে ২০২৫ সালের রমজান মাস ও ঈদযাত্রার সময়েও ঢাকায় তেমন যানজট দেখা যায়নি। রবিবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা গেছে। সেই সাথে ঘরে ফেরা মানুষদের নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরতেও দেখা গেছে।
যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের তদারকিও লক্ষ্য করা গেছে প্রতিটি বাস টার্মিনালে।
পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের সাথে কথা হলে তারা বাংলা এডিশনকে জানায়, গত কয়েক বছর ঈদের আগে তীব্র যানজট ও নানামুখী প্রতিকুলতা পার করে পরিবারের কাছে ফিরতে হয়েছে তাদের। তবে এই প্রথমবার স্বস্তির সাথে পরিবারের কাছে ফিরছেন তারা।
রবিবার সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনযাত্রীরাও বাংলা এডিশনে তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। ঈদে ঢাকা থেকে পরিবারের কাছে ফেরার দীর্ঘ ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা বাংলা এডিশনকে বলেন একজন যাত্রী।
এছাড়াও অন্যান্য যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার ঈদযাত্রার সময়ে ঢাকার নতুন চিত্র দেখছেন তারা। টিকেট সিন্ডিকেট না থাকায় তাদের ঈদযাত্রা অনেক সহজ হয়েছে এবং যানজট না থাকায় স্বস্তি ফিরেছে এবারের ঈদ যাত্রায়।
এর আগে বিভিন্ন সময় ঈদ’কে সামনে রেখে গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন ও বোনাসের দাবীতে আন্দোলন করতে দেখা গেছে। তবে এবছর ঈদের আগেই গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন বোনাস পরিশোধ করে শ্রমিকদের ছুটি দিয়েছেন গার্মেন্টস মালিকেরা। গাজীপুরে শতভাগ কারখানা শ্রমিকেরা বেতন বোনাস পরিশোধ করায় শ্রমিকদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে বলে জানা যায়।
এছাড়াও বিগত বছরগুলোতে রমজান মাসকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পন্যের দাম বাড়াতে দেখা গেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে নাভিশ্বাস ফেলতে হয়েছে।
তবে এবছর রমজানে সেই চিত্রও ভিন্ন ছিল। অন্য বছরের তুলনায় এবছর মূল্যবৃদ্ধির পরিবর্তে মূল্যহ্রাস পেয়েছে অনেক পণ্যে। এছাড়াও গত বছরগুলোর তুলনায় প্রায় সকল পণ্যের দাম এই রমজান মাসব্যাপী স্বাভাবিক থাকার কথা জানা যায় বাজার ঘুরে।
সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি কমে যাওয়ায় বাজারে স্বস্তি ফিরেছে বলেও দাবী ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের।
প্রতি রমজানে তীব্র মাত্রায় লোডশেডিংয়ের অভিযোগ ছিল। কিন্তু এই বছর রমজানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল বলে জানা যায়।
এবছর রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল এবং ঈদযাত্রা সহজ হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং,যানজট ও টিকেট সিন্ডিকেটসহ সকল প্রতিবন্ধকতা আওয়ামী সরকার পতনের পর স্বাভাবিক হয়েছে। যেটি অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের উদ্যোগে সকল সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়ার সুফল বলে ধারণা করেছেন দেশের সাধারণ মানুষ। হাসিনার পতন হয়েছে। তবে তার দোসররা এখনোও রয়েছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে দুর্নীতি দুর করা সম্ভব হলে, বাংলাদেশ হবে দারিদ্রমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ একটি দেশ।
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন https://www.youtube.com/watch?v=1xO3c5LHTsw
আরও পড়ুন: