
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গণভবনে যাচ্ছেন শেখ হাসিনাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে। ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে সিরিয়াল ধরে ছবিও তুলছেন। এসব শুনে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। ঈদের দিনের এই দৃশ্য বিগত বছরগুলোর। অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এমন দিন দেখার সম্ভাবনা নেই, কারণ সবাই শিকরের টানে বাড়ি ফিরলেও পলাতক হাসিনা ও তার নেতারা বাড়ি ফেরেনি। কেউ পালিয়ে আছে দেশের বাইরে, কেউ আবার দেশেই আত্মগোপনে আছেন। আবার আওয়ামী লীগের প্রায় ১০০ জনের বেশি এমপি-মন্ত্রী জেলে আছেন। প্রভাবশালী এসব নেতাদের জেল জীবনে কেমন কাটছে ঈদ?
এই ছবিতে যাদের দেখছেন তাদের কেউ আছেন দিল্লি, কেউ ইউরোপ-অ্যামেরিকায়, আবার কেউ জেল খানায়। আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও সিনিয়র নেতা মিলিয়ে ১০০ জনের বেশি এবার জেল-হাজতে ঈদ করছেন। এদের মধ্যে আনিসুল হক, শাহজাহান খান, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, দিপু মনি ও সালমান এফ রহমান এবং গোলাম দস্তগীর গাজীসহ আরও অনেক প্রভাবশালী নেতা।
দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে সম্পদের পাহাড় গড়া আওয়ামী লীগের এসব নেতারা আসামীদের কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদ করছেন। এমনটা কেউ কখনো ভাবতেও পারেনি। তারা নিজেরাও কখনো কল্পনা করেনি কোটি টাকার সম্পদ রেখে জেলের খাবার খেয়ে ঈদ করবেন। প্রতিবছর ঈদ আসলে এসব নেতারা গাড়ি বহর সঙ্গে জমিদারি হালচাল-নিয়ে নিজের এলাকায় যেতেন। সেখানে সাধারণ মানুষের সাথে ঈদ করার নামে দলীয় লোকদের নিয়ে আসর বসাতেন আওয়ামী লীগ নেতারা। প্রকৃতির বদলা হিসেবে এবার জেলে ঈদ করছেন তারা।
ঈদের দিন কারা বিধি অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন জেলে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা। কারা বিধি অনুসারে বন্দীদের তিন স্তরে ভাগ করা থাকে, কয়েদি, হাজতি ও ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী। তাদের খাবারের তালিকায়ও কিছু ভিন্নতা রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে হাজতিদের থেকে কয়েদিদের খাবারের সমান্য পার্থক্য থাকে। তরকারি একই পরিমাণ থাকলেও কয়েদিদের জন্য ভাত বেশি দেয়া হয়। তবে হাজতি ও কয়েদিদের থেকে উন্নতমানের খাবার পায় ডিভিশনপ্রাপ্তরা।
স্বাভাবিক সময়ে খাবারের ভিন্নতা থাকলেও ঈদের দিন সবার জন্য একই ধরনের ব্যবস্থা করে কারাকতৃপক্ষ। ঈদের দিন সকালে সবার জন্য মিষ্টি জাতীয় খাবারের বন্দোবস্ত করা হয়। দুপুরে ও রাতেও দেয়া হয় ভালো মানের খাবার। সকালে, মুড়ি, পায়েস খেয়ে নামাজে যায় জেলবন্দীরা। দুপুরে পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস অথবা খাসির মাংস দেয়া হয় তাদেরকে। এছাড়া সবার জন্য কোমল পানীয় ও পান সুপারিরও ব্যবস্থা করে কারাকতৃপক্ষ। আর রাতের খাবারের তালিকায় দেয় হয়, সাদা ভাত, আলুর দম, ডিম অথবা মাছ, লেবু ও শসা।
এদিকে ঈদের দিন স্বাভাবিক নিয়মের চেয়ে পাঁচ মিনিট বেশি সময় ধরে বন্দিরা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এছাড়া স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগও রয়েছে বন্দীদের। তবে এদিন স্বজনরা বাসা থেকে কোনো খাবার নিয়ে আসতে পারবে না। ঈদের দ্বিতীয় দিন বাসার রান্না করা খাবার নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে। কারাকতৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী এসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতার জোরে গাড়িবহর নিয়ে জমিদারি হালে ঈদ পালন করলেও, দিপু মনি, কামরুল ইসলাম, জুনায়েদ আহমেদ পলকের মতো এমপি-মন্ত্রীরা সকালে মুড়ি-পায়েস খেয়ে ঈদ শুরু করেছেন। দুপুরে তাদের খাবারের তালিকায় পোলাও-মাংসের পাশাপাশি এক বোতল কোমল পানীয় ও পান সুপারি ব্যবস্থা করা হয়। আর রাতে ভাতের সঙ্গে মাছ। সালমান এফ রহমান ও গোলাম দস্তগীর গাজী টাকার পাহাড় গড়লেও পায়েস-মুড়ি ও পান-সুপারি দিয়েই ঈদ করতে হচ্ছে তাদের। তাদের মতো প্রায় ১০০ জনের বেশি এমপি-মন্ত্রীরা কারাকতৃপক্ষের বিধি অনুযায়ী খাবার খেয়েই ঈদ করছেন।
শুধু আওয়ামী লীগ নেতারা জেলবন্দী অবস্থায় ঈদ করছেন এমন না। পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীর উর্ধতন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জেলখানায় ঈদ করছেন। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সরাসরি সহযোগি ছিলেন তারা। এর মধ্যে পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, এ কে এম শহিদুল হক ও সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান জেলবন্দী অবস্থায় ঈদ করছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা পালিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন তাদের অবস্থা মোটামুটি জেল বন্দীদের থেকে আলাদা। এশিয়া ও ইউরোপ-অ্যামেরিকার বিভিন্ন দেশে তারা ঈদ করছেন। এর মধ্যে হাসান মাহমুদ, বাহা উদ্দিন নাসিমসহ শতাধিক নেতা দেশ থেকে পালিয়ে ঈদ করছেন। পুলিশ র্যাবের সাবেক অনেক কর্মকর্তাও পালিয়ে ঈদ করাদের তালিকায় রয়েছেন। সাবেক ডিবি প্রধান হারুন-উর রশিদ, বেনজির আহমেদের মতো ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা পালিয়ে ঈদ উদযাপন করছেন।
বিস্তারিত : https://www.youtube.com/watch?v=lUY2EXVb8mU
আরও পড়ুন: