বৃহস্পতিবার

১৭ এপ্রিল, ২০২৫
৪ বৈশাখ, ১৪৩২
২০ শাওয়াল, ১৪৪৬

বাংলাদেশে ইসলামকে ধ্বংস করতে চেয়েছে শেখ পরিবার 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১৫:২০

শেয়ার

বাংলাদেশে ইসলামকে ধ্বংস করতে চেয়েছে শেখ পরিবার 
ইসলামকে ধ্বংস করতে চেয়েছে শেখ পরিবার ।

হিন্দু ধর্মাবল্বীদের শারদীয় দুর্গোতসবকে দেশের সবচেয়ে বড় উতসব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন শেখ হাসিনা। অথচ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। ৯০ শতাংশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে অন্য ধর্মের উতসবকে বড় করে দেখার সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও মুসলিমদের উপরই বেশি নির্যাতন চালিয়েছে হাসিনা। যদিও হাসিনা একাই বাংলাদেশের মুসলিমদের দমন করেছেন এমন না। এর শুরুটা করেছিলেন হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।

বিস্তারিত: https://www.youtube.com/watch?v=6DzQ15ftaOA  

১৯৭২ সালে বাংলাদেশে মুসলিমদের নিয়ে প্রথম ষড়যন্ত্র শুরু করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ধর্ম নিরেপক্ষ রাষ্ট্রের নামে তৎকালীন সময়ে দেশের ৮০ শতাংশ মুসলিমের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন মুজিব। শেখ মুজিব ধর্মনিরপেক্ষতার নামে এ দেশে ধর্মহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছেন।

অক্সফোর্ড, এনসাইক্লোপিডিয়ার মতো বিশ্বকোষের সংজ্ঞা বিশ্লেষনে আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখা দিয়েছেন। সেখানে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ হচ্ছে কোনো ধর্মেই বিশ্বাস না করা। এছাড়া ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ধর্মহীনতা বলেও মন্তব্য করেন দেলোয়ার হোসেন সাঈদী।

শেখ মুজিব রহমান ধর্মনিরপেক্ষতার নামে যে ধর্মহীনতার চর্চা শুরু করেছিলো তাঁর আরও একটি ব্যাখা দিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। ১৯৭২ সালের সংবিধান থেকে ইসলামিক শিরোনাম বাদ এয় শেখ মুজিব। এছাড়া সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক ও রাব্বী জিদিনী ইলমা’ বাদ দেয়া হয়। পাশপাশি দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।

আওয়ামী লীগ তাদের জন্ম লগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ধর্মহীনতাকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে প্রতিষ্ঠার কু-কৌশল অবলম্বন করেছে। শুরুতে এই দলটির নাম আওয়ামী মুসলিম লীগ থাকলেও পরে তা পরিবর্তন করা হয়। মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে শুধু আওয়ামী লীগ নামে রাজনীতি করে তারা।

শেখ মুজিবের মৃত্যুর আগে ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ও আলেমরা নিষ্ঠুরতম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পর সেই নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে মুক্তি পায় দেশের মুসলিমরা। তবে বাংলাদেশ যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশ তাঁর প্রথম স্বীকৃতি দেন জিয়াউর রহমান। শেখ মুজিব ধর্মহীনতার যে সংস্কৃতি চালু করেছিলেন সেখান থেকে বাংলাদেশের মুসলিমদের মুক্তি দেন তিনি। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সংবিধান পরিবর্তন করে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দেন। এর পরিবর্তে ‘পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সর্বশক্তিমান আল্লাহ’র উপর’ এই শব্দ যোগ করেন।  এছাড়া সংবিধানে বিসমিল্লাহ শব্দ ব্যবহার শুরু করেন জিয়াউর রহমান।

তবে পিতার পথ অনুসরণ করে শেখ হাসিনাও ইসলাম বিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। ২০১০ সালে সংবিধানে আবারও ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন হাসিনা। ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের মুসলিমদের জঙ্গি আখ্যা দিয়ে দমন করেছেন হাসিনা।

শেখ হাসিনা জঙ্গি নাটক সাজিয়ে দেশের মুসলিমদের শুধু নির্যাতন করেছে এমন না, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে চিত্রায়িত করেছেন তিনি। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের যাতে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত না করা যায় সেজন্য মাদরাসা শিক্ষাকে ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়েছেন হাসিনা। একই সঙ্গে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ধরে জেলে আটকে রেখেছেন তিনি।

শুধু ধর্মের দিক দিয়ে নয় শেখ হাসিনা রাজনীতির দিক দিয়েও তাঁর পিতার পথ অনুসরণ করেছেন। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব বাকশাল কায়েম করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিলন।

পিতা বলছেন কোনো ‘কিন্তু’ শোনা হবে না, মেয়ে বলছেন সে কারো কাছে মাথানত করে না। এমন চিন্তা থেকেই একদলীয় শাসনের দিকে এগিয়ে যায় আওয়ামী লীগ। শেখ মুজিব আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যদলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন, শেখ হাসিনা নিষিদ্ধ করতে না পারলেও তাদের দমনে নির্বিচারে গুম, খুন চালিয়ে গেছেন। এমনকি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে জেল বন্দী করে রাজনীতি থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। এছাড়া বিএনিপি বেশি বাড়াবারি করলে খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিতেন হাসিনা।

খালেদা জিয়াকে শুধু জেলে ঢোকানোর হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হননি হাসিনা। মিডিয়ার সামনে বেগম জিয়ার দ্বাম্পত্য জীবন নিয়েও কটুক্তি করেছেন তিনি।

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে এমন মিথ্যাচার করে তাঁর সুনাম ক্ষুন্ন করতে চেয়েছেন শেখ হাসিনা। হাসিনার এমন কথার পর প্রশ্ন জেগেছে তাঁর পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে। কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কথা বলার নৈতিক শিক্ষা কোনো পরিবার দেয় না। তবে সেই কু-শিক্ষা পেয়েছেন হাসিনা। শুধু খালেদা জিয়াকে নয় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়েও কটুক্তি করেছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে এমন আরও অনেক মিথ্যা ছড়িয়েছেন হাসিনা। এরমধ্যে তিনি বলেছেন জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ করেনি।

অথচ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মেজর জিয়াউর রহমান ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। কমান্ডার জিয়াউর রহমানের নির্দেশে তাঁর ইউনিটের সবাই যুদ্ধে ঝাপিয়ে। কিন্তু শেখ হাসিনা জিয়াউর রহমানকেও বিতর্কিত করতে চেয়েছেন। জিয়া পরিবারের উপর শেখ হাসিনার আক্রোশ কতোটা ছিলো, এর প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর আরও একটি বক্তব্যে।

তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনার এই বক্তব্য শুনে স্পষ্টভাবেই বুঝে যাওয়ার কথা পারিবারিক শিক্ষার ছিটে ফোটাও ছিলো না শেখ হাসিনার। শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে জিয়া পরিবারের সবার মানহানির চেষ্টা করেছেন তিনি। পক্ষান্তরে জিয়া পরিবারের কেউ কখনো শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারকে ছোট করে কথা বলেনি। তবে শেখ হাসিনার দেশ বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন গোপালগঞ্জের নাম মুছে ফেলা হবে।

শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবার নিয়ে খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ মন্তব্য ছিলো এটি। শেখ মুজিব, হাসিনা ও তাদের ব্যক্তিগত জীবনের কোনো কথাই উল্লেখ করা হয়নি। পারিবারিক শিক্ষার দিক দিয়ে খালেদ জিয়া ও তাঁর পরিবার হাসিনার থেকে এগিয়ে ছিলেন তা বুঝা যায় তারেক রহমানের এই বক্তব্যে।

শেখ মুজিব মারা যাওয়ার পর তাঁর কবর জিয়ারত করেছিলেন তারেক রহমান। এমনকি শেখ মুজিব কোনো ফেরেস্তা বাঁ শয়তান ছিলেন না এমন মন্তব্যও করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। একজন মানুষকে কিভাবে সম্মান দিতে হয় তারেক রহমান সেই শিক্ষা তাঁর পরিবারের কাছ থেকে পেয়েছেন। হাসিনার মতোই শেখ পরিবার থেকে কোনো শিক্ষা পায়নি তাঁর ছেলে জয়।

জিয়া পরিবারের সঙ্গে শেখ পরিবারের আরেকটি বড় পার্থক্য হচ্ছে দুর্নীতির ক্ষেত্রে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তারেক রহমান ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে দুর্নীতিবাজ বানানোর চেষ্টা করেছেন হাসিনা। কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে দূর্নীতির পাহাড় গড়েছে শেখ পরিবারের সদস্যরা। হাসিনা তাঁর ছেলে, মেয়ে ও বোন শেখ রেহানার বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তাদের পরিবারের বিভন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে ১২৪টি ব্যাংক একাউন্টে ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইউনিট। এছাড়া রাজউকের ৬০ কাঠা জমি নিজেদের নামে করে নিয়েছে শেখ পরিবার। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, হংকং ও কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে বিপুল পরিমাণ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুদক। 

গণমাধ্যমের সামনে কত সাবলীলভাবে জিয়াউর রহমানকে খুনি-স্বৈরাচার বলে আখ্যা দিচ্ছেন হাসিনা পুত্র। মায়ের মতো ছেলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশের সবচেয়ে সফল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে মিথ্যা প্রচার করে গেছেন।

নানা-মায়ের মতো ধর্মবিরোধী হয়ে উঠেছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়ও। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে মুসলিমদের জঙ্গি আখ্যা দিয়ে তাদের দমনে উতসাহ দিয়েছেন জয়। পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা জয় বিয়েও করেছেন খ্রিস্টান এক মেয়েকে। খ্রিস্টান মেয়েকে বিয়ে করা নিয়ে এরপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা।

শুধু ছেলেই পশ্চিমা ভাবধারর না হাসিনা নিজেও ব্যক্তিগত জীবনে উগ্র ছিলেন। দাম্পত্য জীবনে স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বনীবনা হয়নি। বৈবাহিক জীবনে স্বামীর সঙ্গে খুব কম সময় কাটিয়েছেন হাসিনা। এ নিয়ে কাউকে কিছু জানতে দেননি তিনি তবে শেখ পরিবারকে যারা কাছ থেকে দেখেছেন তারা এ বিষয়ে সবই জানেন। তাদের মধ্যে মেজর ডালিম অন্যতম। সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে হাসিনার এমন গোপন কথা প্রকাশ্যে এনেছেন মেজর ডালিম।

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়ে হাসিনা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। বিভিন্ন সময় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে হত্যার নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি। দেশ থেকে প্রত্যাক্ষিত হয়েও শিক্ষা নেয়নি হাসিনা। সাম্প্রতিক সময়ে নেতাদের দিক নির্দেশনা দেয়ার সময় তিনি বলেন, ২২৭ জনকে হত্যা করার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।

হাসিনা তাঁর বাবার পথ অনুসরন করে বাংলাদেশকে ভারতের প্রেস্ক্রিপশনে যেভাবে শাসন করেছে এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশ এবং এদেশের মুসলিমরা। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পর আবার দ্বিতীয়বারের মতো মুক্তি মিলেছে মুসলিমদের। ৫ আগস্ট হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় এ মুক্তি মিলেছে তাদের। রাজনীতি, গণতন্ত্র ও ইসলামের চর্চায় হাসিনার আমলে যে বাধা ছিলো, তা এখন নেই। মুক্তভাবে ইসলাম চর্চার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশের মুসলিমরা। 

 

 

banner close
banner close