
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের জন্য অপেক্ষা করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি। অপেক্ষায় আছেন ভারতের উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন কুটনৈতিকও। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার আগমনী বার্তা শুনে নরেন্দ্র মোদিসহ সবাই দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানান।
বাংলাদেশের অন্য কোনো রাষ্ট্রপ্রধান এমন সম্মান কখোনই পায়নি। তবে জোর করে সম্মান আদায়ের চেষ্টা করতে দেখা যায় শেখ হাসিনাকে। বাংলাদেশ জি-২০ ভুক্ত দেশ না হলেও ভারতের আমন্ত্রণে ২০২৩ সালে এই সম্মেলেনে অতিথি হিসেবে যোগ দেন হাসিনা। সম্মেলনে যোগ দিয়ে ফটোশেসন আর সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে থাকার বৃথা চেষ্টা করেছেন তিনি।
বিস্তারিত: https://www.youtube.com/watch?v=cuCceDT4CTU
জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিয়ে মাহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যায় সদস্য দেশগুলোর সরকার প্রধানরা। অতিথি হিসেবে হাসিনাও গান্ধীর সমাধিতে যান। এসময় সবুজ গালিচার পিছনের সারিতে ছিলেন শেখ হাসিনা। সামনের সারিতে থাকা বাইডেন আর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যোগ দিতে সবুজ গালিচা ছেড়ে ঘাসের মধ্যে দিয়ে হেটে আগে যাওয়ার চেষ্টা করেন হাসিনা। হাসিনার সামনে থাকা বিশ্বনেতাদের অসম্মান করে তাদের ঢিঙিয়ে সামনে যেতে চাইলেও যেতে পারেননি তিনি।
হাসিনা সম্মান চেয়েও সম্মান পায়নি আর ড.ইউনুস না চাইতেই বিশ্বসমাদৃত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অ্যামেরিকার মতো প্রভাবশালী দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা ড. ইউনুসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানবো, তবে এর আগে জেনে আসি নরেদ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে ভারতকে কি বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে সবসময় আলোচিত ছিলো সীমান্ত হত্যা, তিস্তা চুক্তি, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও আধিপত্যবাদসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নরেদ্রে মোদির সঙ্গে বৈঠকে আলোচিত এসব ইস্যুতে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া দিল্লিতে আশ্রয় নেয়া হাসিনাকে ফেরত দেয়ার কথাও, মোদিকে জানিয়েছেন ড. ইউনুস।
বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশে পক্ষে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এমনকি বিমসটেকের ইতিহাসে বাংলাদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ড. ইউনুস সংস্থাটির পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
দেশের জন্য ড. ইউনুস যে সুনাম কুড়িয়েছেন এমন সুনাম আর কেউ কখনো নিয়ে আসতে পারেনি। এখন পর্যন্ত অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টেদের সঙ্গে বাংলাদেশি ছয়জন রাষ্ট্রপ্রধান বৈঠক করার সুযোগ পেয়েছেন। তবে বিগত দুই দশক ধরে বাংলাদেশি কোনো সরকার প্রধানকে সেই সুযোগ দেয়নি অ্যামেরিকা। এসময় চেষ্টা করেও হাসিনা কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেনি। ভারতের সহযোগিতায় বাইডেনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেলেও তা শুধু সেলফি তোলায় সীমাবদ্ধ ছিলো।
তবে গত দুই দশকের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গতবছর দায়িত্ব নেয়ার পর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে তৎকালীন অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ড.মুহাম্মদ ইউনুস। এসময় বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে অ্যামেরিকা।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনুস সরাসরি ইসরায়েরলের বিরোধীতা করেন। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারের হত্যার দ্বায় বিশ্ববাসীকে নিতে হবে, এমন কথাও বলেন ড. ইউনুস। এসময় ইসরায়েল- ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেন প্রধান উপদেষ্টা।
ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তবে সাম্প্রতিক সময়ে স্বৈরাচারের দোসররা বিভিন্নভাবে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা বলছেন ইসরায়েলকে সহযোগিতা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তাদের গুজবে থেমে থাকেনি বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে গত মাসে চায়না সফর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এসময় তাকে লাল গালিচার অভ্যর্থনা জানিয়ে স্বাগত জানায় চায়না।
পরে বাংলাদেশের সঙ্গে চায়নার সু-সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে দেশটি প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এর সঙ্গে বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এসময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেয়ার কথা জানান চীনা প্রেসিডেন্ট। চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কথা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। এছাড়া শি জিন পিং চাইনিজ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহী করার অঙ্গীকার করেন।
পরবর্তীতে চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এসময় বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য চীনা বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। তাঁর আহ্বানে ইতিবাচক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন চীনের ব্যবসায়ীরা। এসময় ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্য করেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। বাংলাদেশকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের একমাত্র অভিভাবক হিসেবে আখ্যা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
সফর শেষে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিজিটিনকে চীন সফর নিয়ে সাক্ষাৎকার দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এসময় বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ৫০ বছরের সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়া দুই দেশের পারস্পারিক বাণিজ্যেও ইতিবাচক সম্ভাবনা দেখছেন প্রধান উপদেষ্টা।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস চায়না সফর শেষে অপার সম্ভাবনা নিয়ে ফিরলেও, গতবছর চায়না সফর শেষে দেশে ফিরে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতবিক্ষত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সেখান থেকে উত্তরনের জন্য চায়না সফরে গেলেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে হাসিনাকে। দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে হাসিনা বলেছিলেন তিস্তা প্রকল্পের কাজ ভারতকেই দিবে বাংলাদেশ।
চীন সফর শেষে এমন কথা বলেছিলো হাসিনা। আর ড. মুহাম্মদ ইউনুস চীন সফরে গিয়ে ভারতের সেভেন সিস্টার্সের একমাত্র অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশে নাম বলেন। তিস্তা প্রকল্পের কাজ চীনকে দেয়ার কথাও জানিয়েছেন। এসবের পরই অস্থির হয়েছে ভারতের কূটনৈতিক ভাবনা।
কোনো সফর শেষ করে এসেই আওয়ামী পন্থী সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতেন হাসিনা। যেখানে সাংবাদিকরা হাসিনার তোষামোদিতে ব্যস্ত থাকতেন। রাষ্ট্রপ্রধানের সফরে বাংলাদেশ কতটুকু সুবিধা আদায় করে নিতে পারলো সেসব বিষয় জালাঞ্জলি দিয়ে হাসিনার কতটুকু ফায়দা হয়েছে সেই খোঁজ নিতেন সাংবাদিকরা। বিভিন্ন উদ্ভট প্রশ্ন করে মূল বিষয় দূরে ঠেলে দিতো তারা।
গত বছর শেখ হাসিনার চায়না সফর শেষে এমন প্রশ্ন করেন সাংবাদিক প্রভাশ আমিন। তাঁর এই প্রশ্ন কোনোভাবেই চায়না সফরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো না। এভাবেই হাসিনার পুরো সংবাদ সম্মেলন ছিলো অপ্রাসঙ্গিকতায় সাজানো। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনুস চায়না সফর নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দুই দেশের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন।
দীর্ঘ ১৬ ভারতের আধিপত্যবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার হরণ করেছে। তিস্তার নায্য পানি বন্টন হয়নি, ভারতকে অবাধ বাণিজ্যের সুবিধা দেয়া, ট্রানজিট দেয়াসহ বাংলাদেশ বিরোধী সব কাজই করেছেন হাসিনা। মাত্র কয়েক মাসের দায়িত্বে এসে সেই ভারতের কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তিস্তা প্রকল্প চীনকে দেয়া, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি করা এবং বাংলাদেশকে ভারতের সেভেন সিস্টার্সের একমাত্র অভিভাবক দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। হাসিনা দেশকে দেউলিয়া করতে চাইলেও ড. ইউনুস বহিঃর্বিশ্বে বাংলাদেশকে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পথ দেখাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: