
সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে অনিয়ম ও নির্বিচার গ্রেপ্তারের অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ প্রেক্ষাপটে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে—এতে বলা হয়েছে, এসব মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করার আগে অবশ্যই যথাযথ প্রমাণসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। এ সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতের প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ডিএমপির পক্ষ থেকে একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়, যাতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোতে গ্রেপ্তারের আগে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ ও উর্ধ্বতনের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হয়। এসব মামলায় এজাহারনামীয় আসামির সংখ্যা অত্যধিক এবং অনেক সময় তদন্তে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না মিললেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। তাই পুলিশ প্রশাসন এবার সাবধানতা অবলম্বন করে বলছে—অপরাধ প্রমাণ না হলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, কোনো আসামিকে গ্রেপ্তারের আগে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ—যেমন ভুক্তভোগী বা প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, ভিডিও/অডিও, স্থিরচিত্র, ফোনকলের তথ্য (সিডিআর)—সংগ্রহ করতে হবে। এরপর এই প্রমাণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের জন্য জমা দিতে হবে। যুগ্ম কমিশনার ফারুক হোসেন আরও জানান, “আমরা চাই, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হোক এবং প্রকৃত অপরাধী ছাড়া না পায়।”
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেরে সারা দেশে দেড় হাজারের বেশি মামলা হয়েছে, যেগুলোর প্রতিটিতে কয়েক হাজার করে আসামি রয়েছে। তদন্তে অনেকের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ততা না থাকলেও তাদের নাম দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। এমনকি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসামি করার ঘটনাও সামনে এসেছে। মামলার তালিকা ও গ্রেপ্তার নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ও পুলিশের উচ্চপর্যায় থেকে বারবার বলা হয়েছে—মামলার আসামি মানেই অপরাধী নয়; আগে তদন্ত, তারপরই আইনানুগ ব্যবস্থা।
সাম্প্রতিক পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ডিএমপির এই নতুন নির্দেশনা এসেছে। এর ফলে নিরীহ নাগরিকের অধিকার রক্ষা ও পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই নীতির বাস্তব প্রয়োগ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ ও দায়বদ্ধ আচরণই হবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মূল চাবিকাঠি। যথাযথ তদন্ত ও তথ্যভিত্তিক পদক্ষেপের মাধ্যমেই নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা ও সত্যিকারের অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: