মঙ্গলবার

১৫ এপ্রিল, ২০২৫
১ বৈশাখ, ১৪৩২
১৭ শাওয়াল, ১৪৪৬

চারুকলার ফটক টপকে মোটিফে আগুন, মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ০৭:৪২

আপডেট: ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ০৭:৪৩

শেয়ার

চারুকলার ফটক টপকে মোটিফে আগুন, মামলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উদযাপনের জন্য বানানো ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও শান্তির পায়রা আগুনে পুড়ে গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য বানানো দুটি মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এক যুবককে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চারুকলার বন্ধ ফটক টপকে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও শান্তির পায়রায় তরল দাহ্য পদার্থ ছিটিয়ে লাইটার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ওই ব্যক্তি। এর পর সেখান থেকে একটু দূরে গিয়ে গাছের নিচের অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় কিছুক্ষণ অবস্থান করে মোটিফের দিকে তাকিয়ে থাকে। আগুন জ্বলে ওঠার পর আবারও ফটক টপকে পালিয়ে যায় সে। তার মুখে মাস্ক ছিল। সব মিলিয়ে ওই যুবক তিন মিনিট সময় নেয়। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এ দৃশ্য দেখা গেছে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোটামুটি নিশ্চিত আগুন লাগিয়েছে একজনই। তবে তার মাস্টারমাইন্ড কারা তা তাকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। 

গতকাল শনিবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে এই আগুন লাগানো হয়। এ সময় মোটিফের আশপাশে নিরাপত্তারক্ষী, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য অথবা পুলিশের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

অগ্নিকাণ্ডের পর গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চারুকলায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আগুনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং শাহবাগ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে।

এবারের বর্ষবরণের শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে চারটি মোটিফ তৈরির কাজ চলছিল চারুকলার জয়নুল গ্যালারি-সংলগ্ন মাঠে। একটি প্যান্ডেলে পাশাপাশি চারটি মোটিফ তৈরি করছিলেন ডিজাইনাররা। ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতির মোটিফটিকে লক্ষ্য করেই আগুন দেওয়া হয়। তার পাশে থাকা শান্তির প্রতীক পায়রার অর্ধেক পুড়েছে। 

ফায়ার সার্ভিসের পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজার স্টেশনের কর্মকর্তা রুহুল আমিন অগ্নিনির্বাপণে অংশ নেন। তিনি জানান, ৫টা ৫ মিনিটে আগুনের খবর পান তিনি। এর পরই দুটি ইউনিট এনে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হয়। ৫টা ২২ মিনিটে আগুন নেভানো সম্পন্ন হয়। 

যা বলছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ
প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, কালো টি-শার্ট, ব্রাউন প্যান্ট, কালো স্যান্ডেল পরা ও পেছনে চুলে ঝুঁটি করা একটি ছেলে চারুকলার তিন নম্বর গেট টপকে ভেতরে প্রবেশ করে মোটিফের গায়ে লিকুইড ঢেলে দেয়। তারপর পর্দার আড়ালে গিয়ে লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে একই পথে ছবির হাটের দিকে পালিয়ে যায়। 
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম শেখ মনে করেন, ফ্যাসিবাদী পক্ষের কেউ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও খুব সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদের পক্ষের একটা শক্তি এখানে ঘাপটি দিয়ে আছে। তারাই এই কাজ করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করছি। 

এদিকে আগুনের ঘটনায় ঢাবির এস্টেট অফিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমানুল্লাহ বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।

শোভাযাত্রার বিশেষভাবে ফ্যাসিবাদের মোটিফে আগুন লাগার বিষয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শনিবার এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, হাসিনার দোসররা চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে। 

দুর্ঘটনা নয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: পুলিশ
গতকাল চারুকলায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এটা দুর্ঘটনা নয়, কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করেছে। চারপাশে সিসি ক্যামেরা আছে। ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই করে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে।

শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর বলেন, নববর্ষের শোভাযাত্রা উদযাপনের জন্য অনেকগুলো মোটিফের মধ্যে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রায়’ কীভাবে আগুন লাগল, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ আলামত সংগ্রহ শুরু করেছে।

 

banner close
banner close