
২০২০ সালের ৫ অক্টোবর মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছিলেন মডেল মেঘনা আলম। সেই সঙ্গে মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামে অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি।
গত ৯ এপ্রিল থেকে মেঘনা আলমকে নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। ওই দিন রাতে তাকে ঢাকার বসুন্ধরার বাসা থেকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেঘনা আলমকে আদালতে হাজির করে ডিবি। পরে আদালত বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আটকের কিছু আগে মেঘনা ফেইসবুক লাইভে আসেন।
বিস্তারিত: https://www.youtube.com/watch?v=FpoYW73zvDo
মডেল মেঘনা আলমের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে তার হানি ট্রাপের চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। মেঘনা সিন্ডিকেট সৌদি আরবের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে ট্র্যাপে ফেলে পাঁচ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দাবি করছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। দেশ ছাড়ার আগে সৌদি রাষ্ট্রদূত অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একই ধরনের অভিযোগ করে বলেছেন, মেঘনা আলম এবং তার একটি সংঘবদ্ধ চক্র তাকে হানি ট্র্যাপের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছিল। এরপরই পুলিশ তৎপর হয়ে উঠে।
মেঘনা আলমের কাজ ছিল বিভিন্ন কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেয়া। সেইসঙ্গে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়াও ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশ্লেষকদের ধারণা, তারা বিদেশি কোনো গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করে।
মেঘনা আলমের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও হানি ট্র্যাপ সিন্ডিকেটের সহযোগী মো. দেওয়ান সমিরকে গ্রেফতারের পর চাঁদাবাজির মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, নারীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে আসছেন আসামি দেওয়ান সমির। তার বিরুদ্ধে সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে পাঁচ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের সঙ্গেও মেঘনার ঘনিষ্ঠতার কথা জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা। আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হক, আব্দুল মোমেন ও ওয়বায়দুল কাদেরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি ছাড়াও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলের সঙ্গে মেঘনার ঘনিষ্ঠতার তথ্য-প্রমাণ এখন গোয়েন্দাদের হাতে।
জানা গেছে, মেঘনা আলম সেলিব্রিটি শোয়ের কথা বলে রাষ্ট্রদূতসহ কূটনৈতিক পাড়ার বিভিন্ন উচ্চমহলের সঙ্গে মিশতেন। আর সেই মেশার সূত্র ধরে বিভিন্নভাবে নারী সরবরাহ ও দেহ ব্যবসার একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন তিনি। ফলে আর্থিক সুবিধা, তথ্য পাচার, ভিসা তদবির এমনকি আদম পাচারের মতোও কাজও করত মেঘনা সিন্ডিকেট। তবে বিশেষ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে মডেল মেঘনা আলমকে আটকের পর কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
এদিকে, মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে যে প্রক্রিয়ায় আটক করা হয়েছে, তা সঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
তবে মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে বলে উল্লেখ করেন ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, তার বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খুব শিগগির উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
মডেল মেঘনাকে আটকের প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনার মধ্যে শনিবার ডিএমপির ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সূত্র বলছে, মডেল মেঘনা আলম ইস্যুতে, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদাবক্স চৌধুরী নির্দেশ দেন ডিবিপ্রধানকে সরিয়ে দিতে। তারপরই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
সূত্র আরো জানায়, ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে মডেল মেঘনা আলম গ্রেফতার ইস্যুতে বলি দেওয়া হয়েছে। মেঘনা আলমকে গ্রেফতারের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ওপর মহলের সবাই জানতেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে চাপ আসার পর ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে বলির পাঠা বানানো হলো। আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো, মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে যে প্রক্রিয়ায় আটক করা হয়েছে, তা সঠিক হয়নি।
আরও পড়ুন: