শনিবার

১৯ এপ্রিল, ২০২৫
৬ বৈশাখ, ১৪৩২
২১ শাওয়াল, ১৪৪৬

ত্রিমুখী চাপের আতঙ্কে ভারতীয় সামরিক বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১৬:২২

শেয়ার

ত্রিমুখী চাপের আতঙ্কে ভারতীয় সামরিক বাহিনী
ত্রিমুখী চাপের আতঙ্কে ভারতীয় সামরিক বাহিনী।

গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। দাপুটে এই সরকার প্রধান পতনের পর বাংলাদেশে এক মুহুর্তও থাকতে পারিনি। তড়িঘড়ি করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে পতিত সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে। বাধ্য হয়েই ভারতে আশ্রিত আছেন তিনি কারন, ভারত ছাড়া অন্যান্য কোনো দেশ তাকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি।

বিস্তারিত : https://www.youtube.com/watch?v=RuFuUldc_v8 

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় থাকতে ভারত সরকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল বাংলাদেশের উপর। ভারতীয় আগ্রাসনকে পাত্তা দিয়ে,ভারতের সহযোগিতায় দীর্ঘ সাড়ে ১৬ বছর বাংলাদেশের একক ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা সরকার। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে গুম খুন ও বিরোধী দলের মানুষের উপর নির্মম অত্যাচার করে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সবশেষ ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করতেও নির্বিচারে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহনীর সদস্যদের।  তবে শেষ রক্ষা মেলেনি। পতনের পর গণহত্যার দায়ে একাধিক মামলার আসামি হয়ে ভারতে পালিয়ে আছেন তিনি।

ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সেই থেকে শেখ হাসিনা ও তার দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বেশ আমোদ-ফুর্তিতেই দিন কাটাচ্ছেন দেশটির নিউটাউনের একটি আবাসিক এলাকায়। পলাতকদের ভাষায় আওয়ামী লীগের ‘হেডকোয়ার্টার’ হচ্ছে কলকাতা। এখানে বসেই যাবতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম, সিগন্যাল, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপসহ বিভিন্ন ডিজিটাল এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছেন। অপকর্ম বাস্তবায়নের নির্দেশও দিচ্ছেন এসব মাধ্যম ব্যবহার করে।

জানা গেছে, রোজডেল গার্ডেনের তিন নম্বর অ্যাকশন এরিয়ার দুই নম্বর টাওয়ারের ১১ তলার ১১-সি ফ্ল্যাটে বর্তমানে বসবাস করছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। নিউটাউনের এই অভিজাত ফ্ল্যাটে স্ত্রী, মেয়ে এবং জামাতাকে নিয়ে থাকছেন শেখ হাসিনার অন্যতম আস্থাভাজন সাবেক এই প্রভাবশালী মন্ত্রী। ওই ভবনেরই নিচ তলায় আরো একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়েছেন তিনি। যেটি এখন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ কলকাতায় স্ত্রী, মেয়ে তার সঙ্গে ভারতে বসবাস করছেন বলে জানা যায়। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতার নিউমার্কেটের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাসা ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতাও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভারতে বসবাস করছেন। বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগের এখন চরম দুঃসময় চলছে। কলকাতার রোজডেল গার্ডেন হচ্ছে তাদের টিকে থাকা লড়াইয়ের মূল কেন্দ্রবিন্দু।

ভারত স্বৈরাচার হাসিনা আশ্রিত থেকে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে নানারকম ষড়যন্ত্র করছেন। পতিত হাসিনার সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে চান মোদীও। শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে গিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছেন মোদী সরকার। তবে শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ ইউনূস। শেখ হাসিনা ও মোদী সরকারের সম্মিলিত ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েই ক্ষ্যান্ত নন তিনি। ভারতকে পাশ কাঁটিয়ে চীন,পাকিস্থানসহ ভারতবিরোধী দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়ে ভারতকে কূটনৈতিকভাবে চাপ দিতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে।

বাংলাদেশ শোষণ করা ভারত শুধুই বাংলাদেশের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে তা নয়। দুই দেশের মধ্যকার স্নায়ু যুদ্ধে এখন ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দায় থাকা ভারত নানা ভাবে বাংলাদেশকে চাপে রাখার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ড.ইউনুস সকল ষড়যন্ত্র ঠান্ডা মাথায় নস্যাৎ করে দিচ্ছেন।

বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে হাসিনা পতনের পরপরই বাংলাদেশীদের জন্য ভারতীয় চিকিৎসা ভিসা বন্ধ করেছিল ভারত। তবে ভারত তাতে খুব বেশি সুবিধা করতে পারিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রান্সশীপমেন্ট বাতিল করেছে ভারত সরকার। এবার দাবার কোন চাল দেবেন ইউনূস সরকার সেটি এখনো আপেক্ষায়মান বিষয়। তবে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রান্সশীপমেন্ট বাতিল করে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছেন বলে ধারণা করছে খোদ ভারতীয়রাই।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা গতমাসে চীন সফরে গিয়ে ভারতের সেভেন সিস্টার্স প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দাবী করেছেন সমুদ্রপথে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ। ড.ইউনূসের একথা মোদীর কপালে চিন্তার ভাজ ফেলেছিল। ভারতজুড়ে তোলপাড়ও লক্ষ করা গেছে ড.ইউনূসের ওই বক্তব্যের পর।

বাংলাদেশের সঙ্গে চীন ও পাকিস্থানের সুসম্পর্কের কারণে ইতমধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ত্রিমুখী চাপের শঙ্কা থেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। চিন পাকিস্থান ও বাংলাদেশ যৌথভাবে ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে ভারত নিজের মানচিত্র হারাবে এমনটা আশঙ্কা করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।

চীন শিলিগুড়ি করিডোরের কাছে লালমনিরহাটে নতুন একটি এয়ারবেস নির্মান করছেন। ওই এয়ারবেস চীনকে শিলিগুড়ি দ্রুত আক্রমণের সুযোগ দেবে। যেকারণে ওই এয়ারবেস চালু হলে শিলিগুলি করিডোর দ্বিগুন ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে ধারণা করছেন ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।

ভারতীয় সামরিক বাহিনীর মধ্যেও গভীর উদ্বেগ জন্ম নিয়েছে। শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের বেদখল হলে দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চল ভারতের মূল ভূখন্ডের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বলে ধারণা তাদের। সব মিলিয়ে ভারত সরকার সর্বনাশের খেলায় মেতেছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা। বাংলাদেশের সঙ্গে চীন পাকিস্থানের সম্পর্কের উন্নতি মোদী সরকারের জন্য অশনি সংকেত বলে ধারণা তাদের।

চীন বাংলাদেশের প্রকল্প উন্নয়নে চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরে বিনিয়োগ করেছে। ভারতীয় বিশ্লেষকেরা মনে করেন এই অবকাঠামো সামরিক উদ্দ্যেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে। ভারতীয় সামরিক অফিসারেরা ইতিমধ্যে চীন পাকিস্থান বাংলাদেশ জোট মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপের আহ্ববান জানিয়েছেন। ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা শিলিগুলি করিডোরে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর দাবীও জানিয়েছেন।

বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে ট্রান্সশীপমেন্ট বাতিল করে মোদী নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে। কারন ট্রান্সশীপমেন্ট চুক্তি বাতিলে বাংলাদেশ নেপাল ভুটানে রপ্তানীবানিজ্যে সাময়িক অসুবিধায় পড়লেও ভারত হারাবে মোটা অংকের রাজস্ব। বাংলাদেশের কাছেও এই সমস্যার সমাধান আছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নেপাল ও ভুটানের বানিজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে সাময়িক সময়ের জন্য বাঁধাগ্রস্ত হলেও এতে বাংলাদেশী রপ্তানী আয়ে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানীর জন্য সিলেট ও ঢাকা বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। এতে বাংলাদেশ বিমানবন্দরে তার কার্গো হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা বাড়াতে বাধ্য হবে। ফলে বাংলাদেশের বিমানবন্দরের সক্ষমাতাও বাড়বে।

শেখ হাসিনাকে হারিয়ে মোদী সরকার সর্বনাশের খেলায় মেতেছে। ভূ-রাজনীতিবিদরা বলছেন বাংলাদেশের বিরোধিতা করে মোদী নিজের ক্ষতি নিজেই করছেন। আর ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনাও ইতোমধ্যে বুঝতে শুরু করেছে মোদীর কাঁধে ভর করে বাংলাদেশ শাসনের যে স্বপ্নে বিভোর তিনি সেটি তার দিবাস্বপ্ন।

তবে ভারতীয় কিছু মিডিয়া যেভাবে প্রচার করছেন বাস্তবতা তার থেকে ভিন্ন। বাংলাদেশের সাথে পাকিস্থান ও চীনের সম্পর্কের উন্নতি ভারতের জন্য ভয়ের কিছু নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো রাষ্ট্রকে আক্রমন করেনি। তবে বাংলাদেশকে আক্রমণ করলে বাংলাদেশ সেটি মোকাবেলা করতে সমর্থ্য।

 

banner close
banner close