শনিবার

১৯ এপ্রিল, ২০২৫
৬ বৈশাখ, ১৪৩২
২১ শাওয়াল, ১৪৪৬

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, যুদ্ধে বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১১:৪৪

শেয়ার

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, যুদ্ধে বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল ভারত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের চারপাশ সীমান্তে ঘিরে আছে ভারত। যে ভারত সীমান্ত নিয়ে চীন পাকিস্তানের সাথে কয়েকবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল সে ভারত কেনো কখনো বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে যুদ্ধ করেনি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত অনেক হুম্বি-তুম্বি করেছে। বিশেষ করে এই গুজব চালানো হয়েছিল পলাতক শেখ হাসিনা স্থল পথে বিএসএফের সহায়তায় বাংলাদেশে ফেরার ষড়যন্ত্র করছেন।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে হেরেছিল ভারত। আর এই পরাজয়ের অভিজ্ঞতা থেকে ভারত কখনো বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায় না।

সীমান্তে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল সিলেটের পদুয়াতে। সেখানে বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে ভারতের বিএসএফ একটি ক্যাম্প করে দীর্ঘদিন সে জায়গা দখল করে ছিল এবং সেখান থেকে আরেকটা ক্যাম্প যাবার জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ শুরু করে। এ রাস্তা নির্মাণ নিয়ে বিডিআর আপত্তি তুললেও ভারতের বিএসএফ তাতে কর্ণপাত না করে তাদের কাজ অব্যাহত রাখে।

এমন অবস্থায় বিডিআর সেই এলাকায় তাদের অস্থায়ী অপারেশনাল ক্যাম স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। বিডিআর সেখানে তিনটা ক্যাম্প স্থাপন করে। তা দেখে বিএসএফ সেখানে ছয়টা ফায়ার করে। বিডিআর এগিয়ে গেলে তারা প্রায় ৭০ জনের মতো সেখানে সারেন্ডার করে। বিডিআর পদুয়া দখল করে নেয়।

তারই প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করে বিএসএফ। ২০০১ সালের ১৮ই এপ্রিল কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ি গ্রামের ঘটে যায় বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, বিএসএফ-এর ১৬ জন সৈন্য নিহত হয় এবং বাংলাদেশের তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর, এখন যেটি বিজিবি তার তিনজন সৈন্য নিহত হয়। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি এই যুদ্ধে ১৬ জনের চেয়ে অনেক বেশি বিএসএফ নিহত হয়।

ভোররাতে বড়াইবাড়ি গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা তাদের কৃষি জমিতে সেচ কাজ দেখতে যান। এ সময় তারা দেখতে ধান ক্ষেতে অনেক সৈন্য অস্ত্র নিয়ে হাঁটছে। এই সৈন্যদের কয়েকজন গ্রামবাসীদের কাছে হিন্দি ভাষায় জানতে চান বিডিআরের ক্যাম্প কোথায়? তখন গ্রামবাসী বুঝতে পারেন এরা ভারতের বিএসএফের সদস্য।

বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে বিএসএফ ঢুকে পড়ার খবরটি খুব দ্রুতই বড়াইবাড়ি বিডিআর ক্যাম্পে পৌঁছে দেন স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম লাল। তিনি নিজেও আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সাইফুল ইসলাম লাল যখন বিডিআর ক্যাম্পে যান তখন ক্যাম্পে মাত্র আটজন বিডিআর সদস্য ছিল। তার কাছে খবর পেয়েই বিডিআর সদস্যরা অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুতি নেয়। ভোর পাঁচটা থেকে তীব্র গোলাকগুলির আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে উঠে বড়াইবাড়ি গ্রাম ও তার আশপাশের এলাকা। প্রচন্ড গোলাগুলিতে গ্রামবাসী তাদের বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে যেতে থাকে।

বড়াইবাড়ি বিডিআর ক্যাম্পের আটজন সদস্য প্রচন্ড মনোবল এবং সাহস নিয়ে প্রথম চারঘন্টা লড়াই চালিয়ে গেছেন। এরই মধ্যে আশপাশের আরো দুটি বিডিআর ক্যাম্প থেকে আরও ২০ জন সদস্য বড়াইবাড়িতে আসেন। তারা গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে বিএসএফকে প্রতিহত করে। ১৮ই এপ্রিল স্থানীয় মানুষজনকে সংগঠিত করার কাজ করেছিলেন রুহুল আমিন। বিএসএফকে প্রতিরোধ করার জন্য বিডিআরের সহায়তায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১২ জন সদস্যকে একত্রিত করেন তিনি। বিএসএফ যখন বাংলাদেশের ভেতরে ঢোকে তখন অনেক গ্রামবাসী পালিয়ে গেলেও পরবর্তীতে আবার ফিরে আসে। এরপর তারা বিডিআরের সাথে মিলে বিএসএফের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বাংলাদেশ বিজিবি ক্যাম্প ও বড়াইবাড়ি ছিটমহল দখলে নেয়ার পর বিএসএফের সেই অপচেষ্টা প্রতিরোধ করে তৎকালীন বিডিআর জোয়ান ও সীমান্তবাসীরা।

ওইদিনের বিএসএফ-বিজিবির মাঝে প্রায় ৪২ ঘণ্টা সম্মুখ যুদ্ধে বড়াইবাড়ি ছিটমহলের ১৭৯টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিজিবির সঙ্গে সীমান্তবাসীর একযোগে প্রতিরোধের মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হয় বিএসএফ। সম্মুখ যুদ্ধে বিজিবি সদস্য নায়েক সুবিধার ওয়াহিদ মিয়া, সিপাহী মাহফুজুর রহমান এবং সিপাহী আব্দুল কাদের শহিদ হন।

৮ই এপ্রিল ভোর পাঁচটা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত একটানা গোলাগুলি হয়। এরপর কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবারো শুরু হয় গোলাগুলি। এভাবে ১৮ই এপ্রিল সারাদিন এবং রাত গড়িয়ে ১৯শে এপ্রিল রাত পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি চলে। বড়াইবাড়ি সংঘর্ষে ১৬ জন বিএসএফ সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া যায় বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে। আটক করা হয় ভারতীয় সৈন্যদের। আটকের পর ভারতীয় সৈন্যদের মৃতদেহ ২০শে এপ্রিল ভারতে ফেরত পাঠানো হয়।

উভয়পক্ষ অস্ত্র সংবরণে সম্মত হওয়ার পর অবশেষে ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ২১শে এপ্রিল সংঘর্ষ শেষ হয়। সংঘর্ষে ১৬ জন ভারতীয় সৈন্য ও তিনজন বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষী সহ মোট ২১ জন নিহত হন। এই ঘটনা ভারতীয় বাহিনীর মধ্যে ভয় ধরিয়ে দেয়। বাংলাদেশের কাছে এই পরাজয়ের বেদনা এখনো ভুলতে পারেনি নরেন্দ্র মোদির ভারত। তবে সেই যুদ্ধে অবিশ্বাস্য সাহসিকতার যারা পরিচয় দিয়েছিল, ভারতীয় সেই যুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছিল তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি সেই সময়ের ক্ষমতায় থাকা নতজানু শেখ হাসিনার সরকার।

banner close
banner close