
মডেল মেঘনা আলমের সাথে আরও দুজন রাষ্ট্রদূতের সম্পর্ক ছিল। তাদেরকেও ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইল করার পরিকল্পনা ছিল মেঘনাসহ তার সহযোগিদের। যদিও মেঘনা গত বৃহস্পতিবার আদালতে বলেছেন, একমাত্র সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। মেঘনা আলমের সহযোগি দেওয়ান সমিরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে এরকমই তথ্য মিলেছে। সূত্র দাবি করেছে, মেঘনা ও তার সহযোগিরা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা পরিচালিত। সেই সব তথ্য অনুসন্ধানের জন্য মেঘনা আলমকে আগামীতে জিজ্ঞাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হতে পারে।
চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগে গত ১৫ এপ্রিল মডেল মেঘনা আলম, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ধানমন্ডি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল আলীম। সেই মামলায় বলা হয়েছে, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা জনৈক ক‚টনীতিকের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৬০ কোটি টাকা) অর্থ দাবি করেছেন।
তবে মামলার এজাহারে ওই ক‚টনীতিকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। পুলিশ জানায়, দেওয়ান সামিরসহ এই চক্রকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। যারা মেঘনাকে ব্যবহার করে আরও দুজন কুটনীতিককে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেছিল। এমনকি এই চক্রের পেছনে বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থা বা চক্র জড়িত আছে কি না তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এর আগে অনলাইন মিডিয়াতে বেশ কিছু কনটেন্ট প্রকাশ করা হয়েছে-যেগুলোতে তথ্য-প্রমানসহ দাবি করা হয়েছে, বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলাতে বিশেষ করে সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানিতে ধ্বস নামানোর চেষ্টায় মেঘনাকে দিয়ে হানিট্র্যাপ সাজানো হয় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর প্রত্যক্ষ মদদে। এ কাজে স্বৈরাচারি হাসিনা সরকারের কিছু মন্ত্রী, উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও কয়েকজন সাংবাদিকও জড়িত। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ আমলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সাথেও মেঘনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মোমেনকে ব্যবহার করে মেঘনা আলম বিদেশে আদম পাচারও করেছেন। সেই সাথে তিনি ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন অফিসের কর্মকর্তাদের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে অনেক ফায়দা লুটেছেন। সে সময় মেঘনা বেশ কয়েককবার ভারত সফর করেন। এমনকি ভারতের জাতীয় প্রতিটি অনুষ্ঠানে মেঘনা আলম ভিআইপির মর্যাদায় ভারতীয় হাই কমিশন অফিসে উপস্থিত থাকতেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, মেঘনার সাথে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকেরও সুসম্পর্ক ছিল। দুজনের ঘনিষ্ঠ ছবিও দেখানো হয়েছে ওই ভিডিওতে। এসব ছবিই প্রমান করে মেঘনার আওয়ামী লীগ সরকারের একেবারে উচ্চ পর্যায়ে এবং ভারতীয় হাইকমিশনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। হাসিনা ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর তারাই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসাবে মেঘনাকে নিয়োগ দিতে পারে।
সূত্র জানায়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়ান সমির যে সব তথ্য দিয়েছে তাতে পুরো চক্র সম্পর্কে ধারনা পেয়েছে পুলিশ। সূত্র বলছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মেঘনার আবাসস্থল হলেও তারা সৌদি কূটনীতিককে ব্লাকমেইলের পরিকল্পনা করে ধানমন্ডি এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে বসে। প্রথমে সৌদি রাষ্ট্রদূতকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করা হয়। এ কাজটি মেঘনার হয়ে করেন দেওয়ান সামির। প্রথম দিকে সৌদি রাষ্ট্রদূত নিজের মানসম্মানের কথা চিন্তা করে ২ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হলেও চক্রটি ৫ মিলিয়নের দাবিতেই অটল থাকে। বাধ্য হয়ে সৌদি রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনানুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেন। সামিরের দেয়া এই তথ্য যাচাই করে পুলিশ প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছে। কিন্তু চক্রে আর কারা আছে তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জানা গেছে, বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এর তৎপরতা নতুন কিছু নয়। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই ‘র’ বাংলাদেশকে নানাভাবে বেকায়দায় ফেলাসহ ইতিহাস বিকৃতিতে বিরাট ভূমিকা পালন করে আসছে। ‘র’ এর কারণে এদেশের মাটিতে বহু খুনের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ যাতে কোনোদিন মাথাতুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য ‘র’ বরাবরই তৎপর ছিল। হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে ‘র’ এদেশে অনেকটাই স্বাধীনভাবে বিচরণ করার সুযোগ পায়। বিভিন্ন পেশার মানুষকে ‘র’ বাছাই করে তাদের পক্ষে কাজ করাসহ গোপন তথ্য পাচারে সহায়তার জন্য কাজে লাগায়। দেশের মিডিয়াগুলোও চলে যায় ‘র’এর দখলে। হাসিনার পতনের পর ‘র’ আরও তৎপর হয়ে ওঠে। যদিও হাসিনার পতনের সাথে সাথে ‘র’ এর কয়েক স্তরের এজেন্টের মধ্যে ভাটা পড়ে। এই সুযোগে তারা মেঘনার মতো অখ্যাত মডেলদের ব্যবহার করে বিদেশি কূটনীতিকদের হানিট্র্যাপ তৈরিতে তৎপর হয়ে ওঠে।
সূত্র বলছে, শুধু মেঘনা বা দেওয়ান সমির নয়, এসব হানিট্র্যাপে বেশ কিছু ভিআইপিকে ব্যবহার করা হতে পারে। কারণ ভারত যে কোনো উপায়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক বিনষ্ট করতে চায়। তারা যে কোনো উপায়ে ইউনূস সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়।
আরও পড়ুন: