
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, অজানা কারণে পাকিস্তান এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি। যদিও ফ্রান্স এবং জাপানের মতো অনেক দেশ অন্যান্য দেশে তাদের নৃশংসতার জন্য ক্ষমা চেয়েছে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে।
প্রায় ১৫ বছর পর বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনার ফরেন অফিস কনসাল্টেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এসব কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সম্পদ ভাগাভাগিও একটি বড় বিষয়, যদিও আর্থিক হিসাবের দিক থেকে ঢাকার দাবির পরিমাণ খুব বেশি নয়। যত দ্রুত এ সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে, সম্পর্কও ততটাই দ্রুত গতিতে বিকশিত হবে।
এছাড়া তিনি বলেন, এটিও মনে রাখা জরুরি যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট দুটি দেশের সঙ্গে তৃতীয় কোনো দেশের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা উচিত নয়।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেবল দুই দেশের জনগণ এবং অর্থনীতির স্বার্থেই হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ক্ষেত্রে এটি হতে হবে বাংলাদেশের স্বার্থে।’
তবে, তিনি বলেন, পারস্পরিকভাবে লাভজনক অর্থনৈতিক সম্পর্ক কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, যদিও ঘটনাক্রমে বাংলাদেশ বর্তমানে পাকিস্তানের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটি আসলে অনেকাংশে পাকিস্তানের ওপর নির্ভর করে যে তারা বাংলাদেশি পণ্যের জন্য তাদের বাজার কতটা উন্মুক্ত করবে। কারণ শুধু ভালো রাজনৈতিক পদক্ষেপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বেশিদূর এগিয়ে নিতে যথেষ্ট নয়।
এছাড়া এফওসি অনুষ্ঠিত হওয়ার পর রাজনৈতিক পর্যায়ে এর পরবর্তী অগ্রগতির জন্য অপেক্ষা ও আশার কথা বলেছেন ঢাকার বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক বিশ্লেষকরা।
এসব বিশ্লেষক বলেছেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরকারি পর্যায়ের ফরেন অফিস কনসাল্টেশন (এফওসি) -এর পর রাজনৈতিক পর্যায়ে এর অগ্রগতির অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। কারণ এ আলোচনায় ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং সম্পদ ভাগাভাগির মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
সাবেক কূটনীতিক এবং বৈদেশিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব এফওসি-তে তার সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং তাতে এ বিষয়ের কিছুটা অনুরণন রয়েছে। সেইসঙ্গে এটি দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেটিও এর কারণ।’
তিনি বলেন, পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের এ মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফরে আসার কথা রয়েছে, এ সময় এফওসি-তে উত্থাপিত বিষয়গুলোতে কিছু ফলাফল আসতে পারে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই)-এর হুমায়ূন কবির বলেন, ‘আলোচনায় পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে এবং যদি ক্ষমা চাওয়া পুরোনো কোনো ক্ষত দূর করতে পারে, তাহলে ঢাকার সাথে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য ইসলামাবাদের তা না করার কোনো কারণ থাকা উচিত নয়।’
তিনি বলেন, ‘তাদের জন্য কাজটি করার এটি একটি ভালো সময়।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেন, স্পষ্টতই পাকিস্তান এফওসি আয়োজনে আগ্রহী ছিল, এতে ১৫ বছর পর সরকারি পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত ও এতে ৫৪ বছর আগের উদ্ভূত সমস্যাগুলো উত্থাপিত হয়েছে।
ইসলামাবাদে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রাক্তন এ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যা বলা হয়েছে তার অগ্রগতি আমরা দেখবো বলে আশা করি।’
সূত্র : বাসস
আরও পড়ুন: