সোমবার

২৮ এপ্রিল, ২০২৫
১৫ বৈশাখ, ১৪৩২
৩০ শাওয়াল, ১৪৪৬

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে জাতীয় সংলাপ কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১০:৩৬

শেয়ার

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে জাতীয় সংলাপ কাল
প্রবাসীদের ভোটাধিকার।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে জাতীয় সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একাধিক দিনে এ সংলাপ আয়োজনের চিন্তা করলেও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে একদিনেই সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) সম্মেলনকক্ষে এ সংলাপ হবে। সংলাপে পাঁচ ক্যাটাগরির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

এখানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি অনিবন্ধিত দলও থাকছে। তবে ফ্যাসিস্ট ও তাদের অনুগত দল এবং সুশীলদের আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক এ কমিশন। এ কারণে খুবই সতর্কতার সঙ্গে তালিকা তৈরি ও আমন্ত্রণ জানানোয় গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে।

ইসি সূত্র বলছে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে মিশ্র পদ্ধতি অনুসরণ করা হতে পারে। সভার কার্যপত্রে এমন আলামতও রয়েছে। পদ্ধতি তিনটি হলো পোস্টার ব্যালটে ভোটদান, অনলাইন বা ইন্টারনেট ভোটিংব্যবস্থা এবং প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতি।

সংলাপ উপলক্ষে গতকাল রোববার কমিশন থেকে আমন্ত্রিতদের ঠিকানায় দাওয়াতপত্র পাঠানো শুরু হয়েছে। এতে বলা হয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি নিরাপদ ভোটিং পদ্ধতির সম্ভাব্যতা যাচাই, উন্নয়ন এবং উন্নতকরণের বিষয়ে আলোচনা হবে। এ আলোচনার মাধ্যমে প্রবাসী ভোটিং প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, সিস্টেম ডিজাইন ও কারিগরি সম্ভাব্যতা নিরুপণ, যথোপযুক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন, প্রবাসী ভোটিং সিস্টেমে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা এবং আইন, লজিস্টিক ও কার্যকরী চ্যালেঞ্জগুলো এবং সম্ভাব্য সমাধান।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটদানে তৎপরতা আগে কখনো দেখা যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রবাসী ভোটারদের ভোটদানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কমিশনকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান। এরপর নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন দুটি পদ্ধতির প্রস্তাব করে তাদের ভোটদানের সুপারিশ জানায়।

একটি তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা সূচক পোস্টাল ব্যালট, দ্বিতীয়টি অনলাইন (ইন্টারনেট) ভোটিংব্যবস্থা। তবে এর সঙ্গে ইসি আরো পর্যালোচনা করে শুধু প্রক্সি ভোটিংয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। পরে গত ৮ এপ্রিল আরো সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন অংশীজনকে নিয়ে (ঢাবি, বুয়েট, এমআইএসটি, মোফা, আইএফইই, ভেরিডস, ইউএনডিপি, বিসনেস অটোমেশন, বেঙ্গল নেট লিমিটেড, বেসিস, সিনোসিস আইটি, এডিডিএল ও তির্যক প্রাইভেট লিমিটেড) কর্মশালার আয়োজন করে সংস্থাটি।

ওই কর্মশালার উদ্দেশ্য ছিল প্রবাসী ভোটারদের ভোটদানের প্রস্তাবিত পদ্ধতি এবং সংশ্লিষ্ট পদ্ধতির পক্ষে যৌক্তিকতা, সম্ভাব্যতা ও দুর্বলতা তুলে ধরা। সেখানে একক পদ্ধতির বদলে মিশ্র পদ্ধতির সুপারিশ এসেছিল অংশীজনদের কাছ থেকে।

একই সঙ্গে কারিগরি বিষয়ে সুস্পষ্টতা নিরুপণে ঢাবি, বুয়েট ও এমআইএসটি তিনটি পদ্ধতির একটি রুপরেখা প্রস্তুত করে। প্রস্তবনায় ডিজিটাল লিটারেসির নিরিখে কয়েকটি বিষয় উঠে আসে। এগুলোর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য যেকোনো একটি পদ্ধতিতে এয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সম্ভব হবে না বলেই প্রতীয়মান।

তাছাড়া কোনো কোনো পদ্ধতিতে দীর্ঘ ট্রায়াল বা পাইলটিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এমতাবস্থায় কার্যকরভাবে প্রবাসীদের ভোটে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে একাধিক পদ্ধতির একটি হাউব্রিড ব্যবস্থা থাকতে হবে। সৃজিত ব্যবস্থা হতে হবে সহজবোধ্য, বিশ্বাসযোগ্য, সাশ্রয়ী এবং প্রাপ্ত সময়ের মধ্যে সম্পাদনযোগ্য। এটির চূড়ান্ত রূপদানের জন্য আগামীকাল জাতীয় সংলাপে বসছে ইসি। সংলাপে ২৪টি রাজনৈতিক দল, তিনটি অনিবন্ধিত দল, ১১ জন সুশীল প্রতিনিধি, ২৪ জন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং সাবেক ও বর্তমান কমিশনারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, গণফোরাম ও জাসদ উল্লেখযোগ্য। অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো হলো এনসিপি, লেবার পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। সুশীল প্রতিনিধিদের মধ্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, সিপিডির ড. মুস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সলিমউল্লাহ খান, কূটনীতিক হুমায়ুন কবির, রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার ও দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক এনামুল হক, রুবায়েত ফেরদৌস। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের মধ্যে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ নয়া দিগন্ত সম্পাদক, দিনকাল সম্পাদক ও ইনকিলাব সম্পাদক।

মিশ্র পদ্ধতিতে ভোটদান হলেও সবকটির নিবন্ধন প্রয়োজন হবে। রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম অনলাইন পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে হবে। পদ্ধতিটি হলো রেজিস্ট্রেশনের জন্য নির্ধারিত অনলাইন পোর্টাল, প্লাটফরমের লগইন ‘প্রোমোট, অপশন ও স্ক্রিন-এ ভোটার তার এনআইডি ডপ প্রদর্শন ক্যাপচা ইনপুট দিয়ে সিস্টেমে লগইন করবেন এবং কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে পরিচিতি শনাক্ত করবেন। প্রদত্ত অপশনের মধ্য থেকে ব্যবহারকারী তার পছন্দের একটি টুএফএ (টু ফ্যাক্টর অর্থেনটিকেশন) পদ্ধতি সিলেক্ট করে তা প্রয়োগ করবেন। সফল হলে ‘প্রবাস যাপন’ সংক্রান্ত তথ্য আপলোড করবেন। অপশনগুলো থেকে পছন্দীয় ভোটিং পদ্ধতি সিলেক্ট করবেন। এভাবেই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করবেন।

পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি

সব দেশে একটি করে পোস্টাল ভোট নিয়ন্ত্রণ স্টেশন স্থাপন করা, সার্বক্ষণিক হেল্প ডেস্ক নিশ্চিত করা, দেশে দেশে তিনটি পৃথক পোস্টাল ভোটিং ইউনিট, ১০০টি নির্বাচনি আসনের জন্য একজন করে প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ এবং ওএমআর উপযোগী ব্যালট মুদ্রণ।

অনলাইন ভোটিং

সফলভাবে রেজিস্ট্রেশনের সময় ভোটার তার পছন্দীয় পদ্ধতি সিলেক্ট করা, ভোটগ্রহণের স্বার্থে ভোটার তালিকা পৃথকীকরণ, ভোটগ্রহণের দিন ভোটার সফলভাবে সিস্টেমে লগইন করবেন; তার পরিচিতি শনাক্ত করা এবং পরে ফেস ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে ভোটিং অপশনে গিয়ে পছন্দ অনুযায়ী ভোটদান এবং প্রাপ্তিস্বীকার গ্রহণ করা।

প্রক্সি ভোটিং

প্রক্সি ভোটারের নিকটাত্মীয় হতে হবে, প্রবাসী ভোটার, প্রক্সি ও সাক্ষীকে একই এলাকার হতে হবে এবং একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ একজন প্রবাসী ভোটারের প্রক্সি হতে পারবেন।

 

banner close
banner close