
শ্রমিক পাঠানোর নাম করে রাশিয়ায় যুদ্ধের জন্য মানব পাচারের দায়ে অভিযুক্ত ট্রাভেল এজেন্সিকে নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেও সমালোচনার মুখে পিছু হটেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিতব্য কর্মশালায় একমাত্র ট্রাভেল এজেন্সি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় বিতর্কিত রিক্রুটিং এজেন্সি ড্রিম হোম ট্রাভেলসকে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি ভুলবশত বা বেখেয়ালে এমন হয়েছে। তবে তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সি পাড়ায়।
গত রোববারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কর্মশালার জন্য নোটিস জারি করা হয়। সেখানে বলা হয় ২৯ এপ্রিল (আজ) মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দিনব্যাপী ‘রাশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে লাগসই কর্মপন্থা নির্ধারণ’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ, বিএমইটি, বোয়েসেল, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, ওয়েজ আর্নার কল্যাণ বোর্ড, আইএলও, আওএম, বায়রা’র সঙ্গে একমাত্র এজেন্সি হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে মানবপাচারে জড়িত ড্রিম হোম ট্রাভেলসকে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়। অথচ রাশিয়ায় মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানী থেকে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার অংশীদার ফাবিহা জেরিন তামান্নাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় নেপালে পালিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ড্রিম হোম ট্রাভেলসের বনানী ৪ নম্বর রোডের এফ ব্লকের ৪ নম্বর বাসায় যে অফিস রয়েছে তা সম্পূর্ণ ফাঁকা। বাসার দায়িত্বরত কেয়ারটেকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত শুক্রবার তড়িঘড়ি করে এই ট্রাভেলস কর্তৃপক্ষ সবকিছু নিয়ে চলে যায়। বাসার মালিকের বকেয়া ভাড়া না দিয়েই আত্মগোপন করেছে তারা। পরবর্তী সময়ে উত্তরাসহ তাদের সবকটি অফিসের ঠিকানায় গেলেও দেখা যায় একই অবস্থা। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের সবকটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
মানবপাচারে অভিযুক্ত থাকার অপরাধে আত্মগোপনে থাকা একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে আমন্ত্রণ পায় এবং তাদের সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের বেখবর রিক্রুটিং এজেন্সির বাজারে কেমন প্রভাব পড়বে তা জানতে চাইলে বায়রা’র একাধিক সদস্য জানান, ক্লিন ইমেজের ট্রাভেলস এজেন্সি রেখে মন্ত্রণালয় কীভাবে বিতর্কিত এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ করে তা বোধগম্য নয়। তারা বলেন, মন্ত্রণালয় যদি বলে এটি ভুলবশত হয়েছে তাহলে এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ প্রত্যেকটা ট্রাভেল এজেন্সির সব রিপোর্ট তাদের কাছে রয়েছে। এখানে এত বড় ভুল হওয়ার সুযোগ নেই। রাশিয়ার এই বিষয়টি আলোচিত একটা ইস্যু, এখানে তাদের ভুল হওয়া দুঃখজনক।
তথ্য মতে, প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকা বেতনের আশ্বাসে ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর ‘ড্রিম হোম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেড’ এজেন্সি নাটোরের সিংড়ার হুমায়ুন ও ভগ্নিপতি মো. রহমত আলীকে রাশিয়ায় নিয়ে যায়। প্রথমে তাদের ইউরোপের দেশ সাইপ্রাসে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে তাদের রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধের জন্য বিক্রি করে দেওয়া হয়। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় হুমায়ুন মারা যান। তার ভগ্নিপতি মো. রহমত আলী এখন রাশিয়ায় আটকা।
বায়রার সদস্য আল-সুপ্ত ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, আমি জানি না বিষয়টি কতটুকু সত্যি। তবে সত্যি হয়ে থাকলে এটা অবশ্যই দুঃখজনক। এ সময় তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের মতো একটি জায়গায় এসব বিতর্কিত এজেন্সিগুলো যদি প্রবেশের সুযোগ পায় তাহলে তারা আরো বেপরোয়া হওয়ার সুযোগ পাবে। আর সাধারণ মানুষ প্রতারিত হয়ে সব ট্রাভেল এজেন্সিকে একই চোখে দেখবে। তিনি বলেন, এসব ঘটনা আমাদের জন্য শোভন নয়।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ আলি বলেন, নোটিস সোমবারে পরিবর্তন হয়েছে। এটা ভুলবশত হোক বা যেভাবেই হোক হয়েছে। তবে আমাদের নজরে যখন পড়েছে তখনই পরিবর্তন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: