২৪-এর জুলাই বিপ্লবে হাজার হাজার শহীদ ও প্রায় লক্ষাধিক আহত। আহতদের মধ্যে মারাত্মক আহতের সংখ্যা একেবারে কম নয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আহতদের ভিডিও একবার দেখলে আর একবার দেখা যায় না। এমন বীভৎসতা চোখ নিতে পারে না। হৃদয় গ্রহণ করতে পারে না। মাঝে মাঝে মনে বিদ্রোহ দানা বাঁধে। আবার মাঝে মাঝে মনের অজান্তেই চোখে অশ্রু ঝরে। এ কেমন জীবন তাদের! সুস্থ সুঠাম দেহ ছিলো যার, আজ সেই পঙ্গু। ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটে। দু চোখ ভরে পিতা-মাতা ভাই বোনকে দেখে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে জাগত যার, সেই আজ হতভাগ্য। স্ত্রী সন্তানদের দেখে যার হাজারো দুর্দশার মাঝে নতুন করে বেঁচে থাকার অদম্য অভিপ্রায় জাগত সেই আজ মরতে চায়। সবুজ শ্যামলের চাদরে মোড়া এই সুন্দর বাংলাদেশ দেখে দেখে যে ভাবতো, ভারতীয় আধিপত্যের কারণে কোনদিন যদি দেশের জন্য প্রাণ দিতে হয় প্রাণ দিয়ে শহীদ হবো। ধন্য হবো। আজ সেই মরতে চায়। সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে যে ভার কমিয়ে দিত, পিতা-মাতা ছোট ভাই বোনের আশ্রয় ছিলো যে, আজ সে নিজেই সংসারের চরম বোঝা। যে একা রোজগার করে জীবিকার্জনের জীবনযুদ্ধে রাত দিন পরিশ্রম করতো তার সেই সংসার আজ পথে বসেছে। সে আজ আর সংসারের কারো মুখে অন্ন তুলে দিতে পারে না, সে নিজেও নিরন্ন। যারা চেয়েছিল এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে তারাই আজ অঝোরে কাঁদছে। এমন তো হবার কথা ছিলো না। তবে কেন হলো? আজকের লেখায় সেটাই তুলে আনতে চাই।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি: সদ্য স্বাধীন দেশে যা হয় ৫ই আগস্টের পরে বাংলাদেশেও তার কিছু কিছু হয়েছে। তবে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নাশকতার প্রতাপে ও সীমাহীন লুটপাটে জাতি যেমন দিশেহারা হয়ে উঠেছিল তেমনটি এবার হয়নি। দেশের সকল কলকারখানা যন্ত্রপাতি ভারতীয় সেনারা যেভাবে খুলে নিয়ে গিয়েছিল এবং তা নিয়ে মেজর জলিল যখন শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তার পরপরই ভারতের নির্দেশে মেজর জলিলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল (অরক্ষিত স্বাধীনতা পরাধীনতা- মেজর এম এ জলিল)। ৫ ই আগস্ট এর পরে নিশ্চয়ই এমনটি হয়নি। আর হওয়ার সুযোগও ছিলো না। কারণ ১৯৭১ সালে দেশ লুটপাট করেছে ভারত এবং সহকারী হিসেবে ছিলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও চোর বাটপার। আর এবার ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধেই ছিলো এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। সুতরাং এখানে ভারত লুটপাট করার সুযোগ পায়নি। আওয়ামী লীগের চোরেরা লুটপাট করার সুযোগ পায়নি। আর যারা অগণিত প্রাণের বিনিময়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতা এনে দিলেন তারা তো লুটপাট করে না। তারা চেয়েছে এই দেশ উন্নত দেশের মতো সেবাধর্মী দেশে পরিণত হোক। তাই যারা আফসোস করছে এবং বলছে- এর চেয়ে আগের সরকার বরং ভালো ছিলো, তারা অবশ্যই ১৯৭১ সালের মতো লুটপাট করতে পারেনি, সেই মর্মবেদনা থেকেই বলছেন। কেউ কেউ এদেরকে আফসোস লীগ নাম দিয়েছে। নামকরণের সফলতা বা বিফলতা এ জাতি পরে বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করে সঠিকতা বেঠিকতা নির্ধারণ করবে।
তবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। এটি যথাশীঘ্র প্রয়োজন। দ্রুততার সাথে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথাযথ উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে ঘাপটি মেরে থাকা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগ ইত্যাদি লীগ বিভিন্ন চোরা গুপ্তা হামলা, আক্রমণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই এ সমস্ত করে সরকারকে মারাত্মক মাত্রায় বিপদগ্রস্ত করে ফেলবে। কারণ আওয়ামী লীগ দলটি এখন পেশাদার সন্ত্রাসী গুন্ডা মাস্তানের দল। চোরাই পথে ভারত থেকে অস্ত্র আমদানি করবে এরা। সে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ, হত্যা, রাহাজানি চালাতে থাকবে। একদিক দিয়ে এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে আর একদিক দিয়ে গুজব লীগ গুজব ছড়াতে থাকবে যে, বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না। বাসা থেকে বের হওয়া যাবে না। তাহলে ধরে নিয়ে যাবে। কিডনি কেটে নেবে। ছোট শিশুদেরকে পাচার করে দেবে। নারী এবং যুবতী কন্যাদেরকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করছে অবলীলায়। এ ধরনের কথা গুজব লীগ ছড়িয়ে দিলে মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাবে এবং সারাদেশে আতঙ্ক নেমে আসতে পারে। দেশের ভিতরে অস্থিরতা ও অশান্তি সৃষ্টি করে দিতে পারে। তাই স্থিরতা ও শান্তি দেয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের বিকল্প নেই। বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নের দায়িত্বের শীর্ষে যিনি বসে আছেন তার নিজস্ব কোন মতামত থাকে না। তিনি অতিশয় আমলা নির্ভর ও ব্যক্তিগত সচিব নির্ভর। স্ত্রৈণ পুরুষের মতো ইনি ব্যক্তিগত সচিবত্রৈণ। ব্যক্তিগত সচিব যা বলেন, যা করেন, ইনি তাই শোনেন ও করেন। ব্যক্তিগত সচিবের বাইরে, এনার ব্যক্তিগত কোন চিন্তা ভাবনা ইনোভেশন কিছুই নেই। যে কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ এই মন্ত্রণালয়ের কাঙ্খিত কোন উন্নয়ন ঘটছে না। অতএব জনগণের ভিতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এবং একসময় এনাদের বিরুদ্ধে আবারও জনবিস্ফোরণ ঘটলে বিস্মিত হওয়ার কিছুই থাকবে না।
দ্রব্যমূল্য ও প্রাসঙ্গিক কথা: দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি হয়েছে। সাধারণ জনগণ এবং মধ্যবিত্তের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। সত্যিকার অর্থেই বাজারে কোন কিছু কেনা যায় না। উন্নত মুদ্রা নিম্ন মুদ্রাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিস্থাপিত করে। কিন্তু এত দ্রুত যে ১০ টাকার নোটও বাজার থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে তা বোঝা যায়নি। এখন বাজারে ১০ টাকা দিয়ে আর কিছু পাওয়া যায় না। এটি অর্থনীতিতে ভয়ংকর এক অভিঘাতের নাম। এই কিছুদিন আগেও ভিক্ষুক দুই টাকা ভিক্ষা নিত না। তারপরে ৫ টাকা নিতো না। এখন আর দশ টাকা নেবে বলে মনে হয় না। প্রত্যেকটি দ্রব্যের চড়ামূল্য। এর অবশ্য একটি বড় কারণ হতে পারে অর্থনীতি পুনর্গঠন। বিগত সরকার যখনই প্রয়োজন হয়েছে টাকা ছাপিয়ে সমস্যা সামাল দিয়েছে। এতে মুদ্রাস্ফীতি চরম মাত্রায় পৌঁছেছিল। এই ব্যবস্থা চলমান থাকলে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের মতো হয়ে যেত। যেখানে বস্তায় করে টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে ছোট থলেই করে প্রয়োজনীয় দ্রব্য আনতে হয়। বর্তমান সরকার নিশ্চয়ই এই সুযোগ দেবে না। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস। এর অর্থ দেশ ধ্বংস। নিশ্চয়ই দেশ ধ্বংস হতে দেবে না সরকার। তাই মুদ্রাস্ফীতিতে দেশ ভেসে যাক তা অন্তত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চায় না। যে কারণে টাকা ছাপিয়ে ছাড়ছে না। তাই জনগণের হাতে আগের মতো টাকা নেই। টাকা থাকলে দ্রব্যমূল্য যাই হোক, সহজে বাজার সওদা করতে পারত। সুতরাং আফসোস লীগ উঠে পড়ে লেগেছে। আর বলছে- আহারে এর চেয়ে তো আগে বাজার গেলে কিছু কেনা যেত। এখন তো কোন কিছুতে হাতই দেয়া যায় না।
তারপরও বাস্তবতা হলো দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির রাশ সরকারকে টানতেই হবে। তা না হলে সাধারণ জনগণের ভিতরে অসম্ভব ভুল ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে। জনগণ ক্ষমতাসীনদের উপর ক্ষুব্ধ হলে কি হতে পারে তা জুলাই-আগস্টে ভারতের সেবাদাসী স্বৈরাচার ও তার দলবল দোসর ভালোভাবেই প্রত্যক্ষ করেছে। অতএব সাধু সাবধান।
স্বাস্থ্য খাত ও আশু করনীয়: স্বাস্থ্য খাত-এ শৃঙ্খলা ফেরেনি। বিগত ১৫ বছরে যেভাবে দলীয় বিবেচনায় সব নিয়োগ হয়েছে। তাদের সব ডাক্তার তাড়িয়ে দিলেও চলবে না। আবার এদের স্ব স্ব স্থানে রেখেও জনগণের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিষয়ে উপদেষ্টা প্রয়োজন ছিলো, একজন খ্যাতিমান ডাক্তারের। যে ডাক্তারকে সবাই চেনে, শ্রদ্ধা করে। যিনি সহজেই এই মন্ত্রণালয়ের কার্যপ্রার্থী ও কার্যপ্রণালী বোঝেন। তাহলে তার হাত দিয়ে অতি দ্রুত স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যেত এবং গত গণবিপ্লবে যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসা যথাসময়ে দ্রুততার সাথে নিশ্চিত করা যেত। এখনো বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহায় সম্বলহীন আহত যোদ্ধাদের আর্তনাদ শোনা যায়। এটি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য চরম লজ্জার বেদনার কষ্টের ও প্রতিবাদের। অতএব এখুনি প্রয়োজন সর্বজন গ্রহণযোগ্য একজন ফিজিশিয়ানকে এই মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কাজে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া। শুধু ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া বা ব্যক্তিগত পরিচয়ের ভিত্তিতেই এমপি মন্ত্রী যদি হবেন তাহলে তো জনগণ বলবেই যে আগের সরকারের সাথে এখন আর পার্থক্য রইল কোথায়? মানুষের মুখ তো আর বন্ধ করে রাখা যাবে না। মানুষের মুখ বন্ধ করে রাখতে গিয়ে এত বড় একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের সকল নেতাকে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়েছে। সুতরাং দয়া করে ব্যক্তিগত পরিচয় ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের বাইরে গিয়ে সত্যিকার সত্যগত বিষয়ভিত্তিতে যোগ্যতাসম্পন্ন লোককে যথাযথ স্থানে বসিয়ে দিন।
সাইবার যোদ্ধাদের বিষয়ে করণীয়: জুলাই বিপ্লবে দেশের বাইরে থেকে অনেক নিপীড়িত সাংবাদিক সাইবার যুদ্ধ চালিয়েছেন। এদের মধ্যে পিনাকি ভট্টাচার্য, ডঃ কনক সারোয়ার ও ইলিয়াস হোসেন অন্যতম। এরা বিদেশে বসে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার জন্য প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধার কাজ করেছেন। যার ফলে গত সরকার তাদের আত্মীয়-স্বজন পরিজনকে গ্রেফতার করেছে জেল খাটিয়েছে, আয়না ঘরে নিয়ে গেছে ও নির্মম নির্যাতন করেছে। অথচ এরা দেশে ফিরুক সে ধরনের কোন কাজ সরকার করেনি। আজ অবধি কোন উদ্যোগ নেয়নি। অথচ এই সরকার গঠনের পরপরই মুখ্যলক্ষ্য যতগুলি ছিলো তার অন্যতম হওয়া উচিত ছিলো, এসব নিপীড়িত সাংবাদিকদের অতিদ্রুত দেশে নিয়ে আসা। সেটা বর্তমান সরকার করতে পারেনি। কাদের ইশারায় কোন ইশারায় তা একদিন জাতি বিচার বিশ্লেষণ করবে।
গণমাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কিত: ৫ আগস্টে গণমাধ্যম যে ভূমিকা পালন করেছিল। ৬ আগস্ট প্রত্যেকটি প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বারবার প্রচারিত হয়েছে গত ফ্যাসিস্ট আমলে এদেশের মানুষ কিভাবে নির্মম নির্যাতিত হয়েছে, হত্যার শিকার হয়েছে, গুমের শিকার হয়েছে, আয়না ঘরে হাজার হাজার মানুষকে জীবম্মত অবস্থায় রাখা হয়েছে। এসব দিনের পর দিন জেনেও শুনেও দেখেও যারা কোনো প্রতিবাদ করেনি। ধীরে ধীরে সেই সব গণমাধ্যম ও সাংবাদিকেরা তাদের পুরনো চেহারায় ফিরতে শুরু করেছে। এই বিপ্লব ভুলে যাচ্ছে। এখনো রাজপথে হাঁটলে পায়ে রক্ত লেগে যায় অথচ তাচ্ছিল্যের সাথে সেই রক্ত ঝেড়ে ফেলা হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এই সেক্টরে বিপ্লবপন্থীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। এর বহুবিধ কারণ রয়েছে। বর্তমান মিডিয়ার যারা মালিক তারা হয় ভারতপন্থী না হয় আমেরিকাপন্থী। বাংলাদেশপন্থীর সংখ্যা কম। এই পরিস্থিতিতে তাদেরকে বাংলাদেশপন্থী বানানোর জন্য মোটিভেশনাল কাজ করা দরকার। কারণ এটাই আমাদের দেশ প্রিয় জন্মভূমি। এই দেশের ভালো-মন্দ মিলিয়েই আমরা। কিন্তু তারা তা মানতে চান না। কারণ একটি গণমাধ্যম চালাতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। সেই অর্থের যোগান বাংলাদেশের ব্যবসায়ী বা বাংলাদেশ সরকার দিতে পারেনা। সুতরাং তারা পরনির্ভরশীল এবং পরের যে চিন্তাভাবনা রয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের উপরে চাপিয়ে দিতে তারা বদ্ধপরিকর। তাদের এই যুথবদ্ধ প্রয়াসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে স্বকীয়তা নিয়ে উঠে দাঁড়াতে হলে প্রয়োজন দেশপ্রেমিক গণমাধ্যম। গণমাধ্যম কর্মীদের যথাযথভাবে বেতন নির্ধারণ এবং পেনশনের আওতাভুক্ত করা। সরকারি চাকরিজীবীদের মতো বেসরকারি সকল চাকরিজীবী পেনশন ব্যবস্থা থাকা দরকার এবং সেটি জনগণের অর্থ শোষণ করার জন্য নয়, সত্যিকার অর্থে জনস্বার্থে জনঅর্থ ব্যয় করা দরকার। তা না হলে গণমাধ্যম দ্রুতই বিপ্লব বিরোধী প্রচারণা চালাবে। তখন দেশে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। সেই বিশৃঙ্খলার সুযোগে কে জানে ১/১১ এর মতো আরেকটি সরকার এলেও এসে যেতে পারে।
কারা এবং কেন বলেন আগের সরকার ভালো ছিলো: আয়না ঘরে নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে খেলা করা হতো, ডিবি অফিসে রেগিং দেয়া হতো, আয়না ঘরে নির্মম পৈশাচিক নির্যাতন করা হতো। মানুষের উপর নমরুদ ফেরাউন ও আবু জেহেলিয় কায়দায় নির্যাতন করা হতো। এই ধরনের পৈশাচিকতায় এক ধরনের পাশবিক সুখ পাওয়া যায়, সেই সুখ এখন যারা পাচ্ছে না, তারাই বলছে আগের সরকার ভালো ছিলো। অনেক আবাসিক হোটেল বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কারণ ভাড়াটিয়া কাস্টমার ঝুঁকি নিয়ে যেতে চায় না। অতএব যৌন ক্ষুধায় যারা হতবিহ্বল তাদের কাছে এই সরকার ভালো না। সকল ধর্মের প্রচারণা সহজ ছিলো, ইসলাম ধর্ম ছাড়া। এখন সমতালে ইসলাম ধর্মের প্রচার হচ্ছে, এটা যারা চাচ্ছে না, তাদের কাছে এই সরকার নয়, আগের সরকার-ই ভালো ছিলো। লুটপাট দুর্নীতির শীর্ষে থেকে যারা দেশকে শাসনের নামে শোষণ করতো, সেই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এখন নিষ্প্রভ। তাদের কাছে এই সরকার নয় আগের সরকার ভালো ছিলো। গণমাধ্যমে টকশো নামে বাংলাদেশ-এর মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আলোচনা যারা করতো প্রতিনিয়ত, যারা সমতার নামে মুসলমানদের পদপিষ্ঠ করে বৈষম্যের সূচনা করতো, তারা সব আত্মগোপনে, তাদের কাছে এই সরকার নয়, আগের সরকার-ই ভালো ছিলো। আওয়ামী লীগ না করলেই সব রাজাকার। এই থিওরির প্রবক্তারা আজ আত্মগোপনে, তারাই প্রচারণা চালাচ্ছে এই সরকার নয় আগের সরকার ভালো ছিলো।
শেষ কথা সবিশেষ: যতই যুক্তি-তর্ক দেয়া হোক না কেন গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের সাথে বাংলাদেশের কোন আমলের দুঃশাসনের তুলনা চলে না। তারপরও সত্যিকার অর্থে নাগরিক জীবনে স্বস্তি দিতে না পারলে, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ঠেকাতে না পারলে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে না পারলে, আমলানির্ভর শাসনব্যবস্থার সংস্কার করতে না পারলে, সরকারি চাকরি পাওয়ার আগে ও চাকরি জীবনের সকল বৈষম্য নির্মূল করতে না পারলে, সত্যিকার অর্থে ইনসাফভিত্তিক দেশ গঠন অসম্ভব। আর ফ্যাসিস্ট কখনো ফিরে এলে সেই দেশে কোন ধর্মের মানুষই শান্তি ও স্বস্তিতে থাকতে পারবে না, কখনো পারেও না। তাই আসুন জুলাই বিপ্লবকে স্মরণ করি। এই রক্তের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যারা আহত হয়েছে, তাদের দ্রুত তালিকা করে উন্নত জীবন দেয়ার চেষ্টা করি। সকলেই যার যার অবস্থান থেকে সত্য বলি এবং সঠিক পথে চলি। তবেই গড়ে উঠবে এই দেশ। সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ।
লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক।
আরও পড়ুন: