আজ ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করে। একতা, দৃঢ়তা ও পরাধীনতার মুক্তির চেতনা নিয়ে- সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের আপামর জনতার সাথে সম্মিলিতভাবে মুক্তিযুদ্ধে জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলো।
দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনীর সম্মান, মর্যাদা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা আজ অনেকটা ক্ষুণ্ণ। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ক্রান্তিলগ্নে ও ক্রিটিক্যাল সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বাধিনায়ক হিসেবে পুরোপুরি ব্যর্থতা ও সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থাহীনতার উদারণ সেনাবাহিনীর সমান্তরালে রক্ষীবাহিনী সৃষ্টি। এর ফলে সশস্ত্রবাহিনীর চেইন-অফ-কমান্ড তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে- যার অনিবার্য পরিণাম ১৫ আগস্টের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ।
শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাথে মিলেমিশে ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ঢাকার পিলখানায় সেনাবাহিনীর ৫৭ জন কর্মকর্তা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে- যে পেশাসিক ঘটনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন- বিশ্ব ইতিহাসে এর নজীর নেই। পৃথিবীতে কোনো যুদ্ধে একদিনে এতো বিপুল সংখ্যাক সামরিক কর্মকর্তা নিহত হওয়ার উদাহরণ নেই।
মুজিব কণ্যা শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের পাঁচ আগস্ট লক্ষ-লক্ষ ছাত্র জনতার ধাওয়া খেয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করার পাশাপাশি সামরিক সদস্যদেরকে ক্ষমতা অপব্যবহারের সুযোগ করে দিয়ে সামরিক বাহিনীকে যে ক্ষতি করেছেন তা কাটিয়ে ওঠতে অনেক সময় লাগবে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে অনেকটা রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত বেলারুশের বাহিনীর মতো পরিণত করার অভিযোগ রয়েছে। তবে, পাঁচ আগস্ট দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ছাত্র-জনতার পক্ষে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় এই বিল্পবের চূড়ান্ত পরিণতি বা সাফল্য লাভ করে। এজন্য দেশবাসীর কাছ থেকে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ সংশ্লিষ্ট সবাই স্যলুট ও ধন্যবাদপ্রাপ্য।
ক্ষমতাচ্যূত হলেও শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া দীর্ঘ ১৫ বছরের ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও নানাভাবে প্রভাবিত সেনাবাহিনীসহ সামরিক বাহিনী এবং সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন ও কার্যকর বাংলাদেশের উপযোগী বাহিনীতে পরিণত করার পথে এখনো অনেক বাঁধা। তবে- আমাদের সামরিক বাহিনীকে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও ভাবাদর্শ (’হেজিমনি’) থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস।
এজন্য রাষ্ট্রের বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো সামরিক বাহিনীতে অবিলম্বে ব্যাপক-ভিত্তিক সংস্কার প্রয়োজন। নোবেল শান্তিপুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার এই বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমি আশাবাদী। যাহোক, আমি পাঁচ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশে এখনো ভারত কীভাবে আধিপত্যবাদ ও নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে- সেববিষয়ে আলোকপাত করার পাশাপাশি- ড. ইউনূসের সরকারের এই মুহুর্তে কিছু করণীয় বিষয়ে কিছু সুপারিশ তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পরও নজীরবিহীন ও অপ্রত্যাশিতভাবে ভারতীয় সামরিকবাহিনীর অন্তত চারজন (সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর দু’জন করে) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বাংলাদেশের সামরিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ’মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি’ বা ’এমআইএসটি’তে ‘ফরেন ফ্যাকাল্টি’র আওতায় ইন্সট্রাক্টর হিসেবে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন এবং ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় অবাধে বিচরণ করছেন।
শেখ হাসিনার আমলে দায়িত্ব পাওয়া বাংলাদেশের বড়-বড় শিল্পকাখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যেমন- বিএসআরএম ও আবুল খায়ের গ্রুপসহ বিভিন্ন তৈরিপোশাক প্রতিষ্ঠানের নানা পর্যায়ে ভারতীয় সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের অনেকে নোবেল শান্তিপুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও বিস্ময়করভাবে বহাল তবিয়তে আছেন। এরা সবাই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ’রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং’ সংক্ষেপে আরএডব্লিউ বা ‘র’ এর সদস্য বলে ধারণা করা হয়।
এই মুহুর্তে ভারতীয় উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে উপস্থিতি ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকরতা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়।
অবাক হওয়ার মতো বিষয়টা হলো- বিগত ১৫ বছরে এমআইএসটিতে শুধু ভারতীয়দেরকে বিদেশি ফ্যাকালটি বা ইন্সট্রাক্টর হিসেবে বার-বার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সামরিক উৎকর্ষতার দিক হতে আরো উন্নত দেশ, যেমন- চিন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি, ইত্যাদি থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে একজনও স্থায়ী ফরেন ফ্যাকাল্টি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার উদাহরণ নেই।
বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার- উজ-জামানের কাছে জিজ্ঞাসা- শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তিনমাস অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশের ভেতর থেকে ভারতীয় উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদেরকে এখনো কেন বিতারিত করা হয় নি? কী করে তারা এখনো ঢাকা সেনানিবাস এলাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল এলাকায় অবাধে বিচরণ করছে? আসলে, এমআইএসটিতে ফেকাল্টি মেম্বার হিসেবে ভারতীয় সামরিক কর্তারা বাংলাদেশে অবস্থান করে শিক্ষকতার পেশার আড়ালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রীয় সর্বক্ষেত্রে ভারতীয় গোয়েন্দা নজরদারি তৎপরতা এখনো অব্যাহত রেখেছেন বলে অনেকের অভিমত।
শেখ হাসিনা মূলত তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তথা বিএনপি ও জামাত-ই-ইসলামীর নেতাকর্মীদেরকে দমন-পীড়নের লক্ষ্যে- ভারতীয় সামরিক সদস্যদেরকে বাংলাদেশের জনপ্রশাসন, পুলিশ, সামরিক ও বেসামরিক নিরাপত্তাবাহিনী, সেনাবাহিনী, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সমুদ্রবন্দরসহ সর্বক্ষেত্রে অবাধে অবস্থান করার সুযোগ দিয়েছেন।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সদস্য ও স্থানীয় (বাংলাদেশি নাগরিক) এজেন্টরা শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাসহ সমস্তকিছুতে প্রভাব বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ’র’ এর সার্বিক নির্দেশনা ও সহায়তায় শেখ হাসিনার পুরো শাসনামলে বাংলাদেশে বিরোধীপক্ষ ও বিরুদ্ধমত পোষণকারী সামরিক, আধাসামরিক ও বেসামরিক মানুষকে দমনের করা হয়।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর উপত্যকায় যেসব কায়দায় কাশ্মীরের মুসলিমদের ওপর ভারতীয় সামরিক বাহিনী দমন-পীড়ন-নির্যাতন চালায়- সেই কাস্মীরের আদলে বাংলাদেশে ’আয়নাঘর’ নামে ভয়ঙ্কর নির্যাতন সেল পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে চিনের সাথে ও ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে পূর্বতন ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ব্যর্থতার জন্য নতুন গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান হিসেবে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয বা ’র’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সংস্থাটির প্রাথমিক কাজ হচ্ছে- বিদেশি সরকার, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের তথ্য ভারতীয় নীতি-নির্ধারকদের কাছে সরবরাহ করা।
বাংলাদেশে বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলাচত্বরে গণহত্যা, গুম-খুন, এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিল্পবের সময় সারাদেশে সংগঠিত গণহত্যার সাথে ’র’ এর সদস্যরা সরাসরি ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয় নাগরিক ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে অবাধে দাপটের বিচরণ করতে দেখা গেছে। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক ও আইটি খাতে ভারতীয়দের একচেটিয়া দাপট। দক্ষ জনশক্তির অভাবে পোশাকের বায়িং হাউজ, সংবাদমাধ্যম, বিজ্ঞাপন, কনসালটেন্সি খাত নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশে অবৈধভাবে কর্মরত প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক ভারতীয় নাগরিক। ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে- বিনা ওয়ার্কপারমিটে কাজ করে উপার্জিত পুরো টাকা অবৈধ পথে ভারতে চলে যায়। টিআইবি’র এক প্রতিবেদন মতে, এভাবে প্রতিবছর প্রায় ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ হতে ভারতীয়রা পাঁচার করে। এই সুযোগটা শেখ হাসিনাই দিয়েছেন।
শেখ হাসিনার পুরো শাসনামলে ’র’ এর এজেন্টদের বাংলাদেশে অবস্থান সহজতর ও জায়েজ করার লক্ষ্যে- ভারতীয় সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরকে ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই ফ্যাকাল্টিরা বাংলাদেশের ভেতরে ভারতীয় মতাদর্শের অনুসারি ও ’র এর স্থানীয় এজেন্ট তৈরি করার লক্ষ্যে এমএসটিআই শিক্ষার্থীদের একাংশকে ভারতে উচ্চ শিক্ষার জন্য স্কলারশিপসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের ওপর ভারতীয় আধিপত্য নিশ্চিত করতে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে জনসংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যাক ব্যক্তিকে জনপ্রশাসনে বিশেষকরে পুলিশ ও প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পিএসসি কর্তৃক আয়োজিত বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সুপারিশকৃত প্রায় ৩৯,০০০ বিসিএস ক্যাডার প্রার্থীদের ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে ভারতীয় ’র’ এর এজেন্টদের ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। র এর সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রে সনাতন প্রার্থীদের চাকরি নিশ্চিত করতে পিএসসি’র প্রভাব বিস্তার করারও অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় স্থানীয় এই এজেন্টরা আগামী ৩০-৩৫ বছর বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে ভারতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়।
’র’ সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মধ্যেও ঢুকে যাওয়ার আলামতও প্রত্যক্ষ করা গেছে। আওয়ামী লীগের বাইরে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে ভারতীয় অনুচর প্রবেশ করারও আলামত লক্ষ করা যায়। এছাড়া গণমাধ্যমে র এর সদস্যদের এখনো অবাধে কাজ করার উদাহরণ রয়েছে। দৈনিক কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং সন্তোষ শর্মা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ’র’ এর সক্রিয় সদস্য। আপনাদের অনেকে হয়তোবা ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার শাসনামলে আয়নাঘরসহ বিভিন্ন টর্চারসেলে দেশের আলেম সমাজের গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদকালে উপস্থিত থাকার প্রমাণ জুলাই-আগস্ট বিল্পবের অন্যতম নেপথ্য সংগঠক ও সাহসী সাংবাদিক ইলিয়াছ হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে দেখেছেন।
বাংলাদেশে র এর উপস্থিতিতে ড. ইউনূস সরকারের চ্যালেঞ্জসমূহ
সার্বিক পর্যবেক্ষণে মনে হয়- ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের বিভিন্ন রূপধারণ করে বাংলাদেশে অবস্থানের প্রধান লক্ষ্য হলো- ড. ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্র সংস্কারের সব উদ্যোগ ভেস্তে দেওয়া, বিল্পব-পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক বিকাশের পথ ব্যাহত করা এবং আমাদের সামরিক বাহিনীকে ঘুরে দ্বাঁড়াতে না দেওয়া।
ড. ইউনূস অনেক আন্তরিকতা নিয়ে দেশ পুনর্গঠনে কাজ করলেও বিগত ১০০ দিনে ড. ইউনূসের সরকার একদিনের জন্য স্বস্তিতে কাজ করতে পারেন নি। গত তিনমাসে ড. ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলা বা অজনপ্রিয় করে তোলার জন্য যেসব তৎপরতা দেখা গেছে- সেসবের পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় এজেন্টদের ইন্ধন থাকার অভিযোগ রয়েছে।
একটার পর একটা পাল্টা অভ্যুত্থানের চেষ্টা; দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য বিভিন্ন পেশাজীবীদের নামে রাজপথে আন্দোলন; তৈরিপোশাক কারখানা এবং বিভিন্ন শিল্পসহ বেসরকারি বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ; অস্থিরতা ও অরাজকতাসহ বাজার সিণ্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্য প্রেয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়া; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সব ধরনের গণমাধ্যমে ড. ইউনূসের সরকারকে নানাভাবে প্রোপাগাণ্ডা চালানো অব্যাহত আছে।
শেখ হাসিনার পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ও সুশাসিত বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিলো- তা নষ্ট করার লক্ষ্যে র এর সদস্য ও বাংলাদেশি এজেন্টরা সক্রিয় বলে প্রতীয়মান হয়।
সরকারের যা যা করতে হবে
রাষ্ট্র ও জনগণ উভয়ের কাছেই সামরিকবাহিনীর গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা আছে। সামরিকবাহিনী জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার রাষ্ট সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন করেছেন; কিন্তু সামরিকবাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর সংস্কারের জন্য এখনো কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায় নি। সেনাবাহিনীও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। এটি সংস্কারের ঊর্দ্ধে নয়।
ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীকে যাতে সরকার বিরোধীপক্ষকে দমন-পীড়ণ-গুম-খুন ও ব্যাংক ক্যুসহ ক্ষমতা অপহারের সুযোগ বন্ধ করতে সরকারের কাছে অনুরোধ- বাংলাদেশের সামরিকবাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংস্কারের লক্ষ্যে- অনতিবিলম্বে মিলিটারি সংস্কার কমিশন গঠন করুন। বর্তমান সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে মাধ্যমে র এর অনুচরদের সেনাবাহিনী থেকে বিতারণ করা যাবে বলে প্রতীয়মান হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তা, যেমন- সাভারে অবস্থিত নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি জেনারেল মঈন এর পাশাপাশি জেনারেল জাহাঙ্গীর, জেনারেল আমিনুল হক ও জেনারেল মুজিব যাদের প্রত্যেকেই র্যাব এ কর্মরত অবস্থায় গুম-খুনসহ মানবাধিকাল লঙ্ঘনের জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা খেয়েছিলো। এদের সবাই ভারতীয় র এর স্থানীয় এজেন্ট ও সুবিধাভোগী। অবিলম্বে এ ধরনের সেনা কর্তকর্তাদের চাকরিচ্যূত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর প্রভাবমুক্ত করার অংশ হিসেবে অবিলম্বে এমআইএসটিতে ফরেন ফ্যাকাল্টির অধীনে আসা ভারতীয় ইন্সট্রাক্টরসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অন্যসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় এখনো কর্মরত ভারতীয় সামরিকবাহিনীর সব কর্মকর্তা বা গোয়েন্দাদেরকে ফেরৎ হবে।
সশস্ত্রবাহিনীকে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও ভাবাদর্শ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে- ড. ইউনূসের সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার কর্মকাণ্ডের অংশহিসেবে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও খাতের ন্যায় সামরিকবাহিনীতে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কারে একটি কার্যকর কমিশন গঠন করতে হবে।
২০২৪ সালের সশস্ত্র বাহিনী দিবসের শপথ হোক- প্রস্তাবিত সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে অর্থবহ সংস্কারের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর পেশাদায়িত্ব ও বেসামরিক প্রশাসনের কাছে কার্যকর গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এতে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব সুরক্ষাসহ সুশাসিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথও সুগম হবে।
লেখক- মো. রেযাউল করিম
গবেষক- ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (২০০৬-’২১)
পিএইচডি কেনডিডেট- মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
মাস্টার্স- অ্যান্টিকরাপশন স্টাডিজ, অস্ট্রিয়া
লাইসেন্সড প্রডিউসার- প্রপার্টি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালটি ইন্সুরেন্স, নিউ ইয়র্ক
ই-মেইল: [email protected]
আরও পড়ুন: