২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসা এবং তার 'আমেরিকা ফার্স্ট' আলোচ্যসূচীর ফলে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয়, বরং মূল্যবোধের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের উপর প্রভাব পড়বে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশও অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন হচ্ছে যার ফলে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন একটি অবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
বাইডেন প্রশাসনের বিপরীতে, ট্রাম্প প্রশাসন আরও বাস্তববাদী হবে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিষয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করবে। জো বাইডেনের প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র উন্নয়ন ও মানবিক সাহায্য প্রদান করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এ ব্যাপারে ডেমোক্র্যাটদের মতো উৎসাহী নাও হতে পারে।
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ২০১৬ সালে প্যারিসে একটি কনফারেন্সে ট্রাম্পের বিজয়কে 'সূর্যগ্রহণের' সাথে তুলনা করেছিলেন, উপরন্তু, তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের বিজয় আমাদের এত গভীরভাবে আঘাত করেছে যে আমি কথা বলতে পারিনি, আমি সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।
অক্টোবর মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি বিতর্কিত টুইট করেন, যেখানে তিনি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কার্যক্রমের সমালোচনা করেছিলেন, দাবি করে যে, " তার প্রশাসনের সময় এটি কখনো ঘটতো না।"
ভারতের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ হবে বাংলাদেশের সাথে, বিশেষ করে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর। এটা খুব সম্ভব যে ট্রাম্প প্রশাসন দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে। ফলে বহুপাক্ষিক সম্পর্কের পরিবর্তে সুপারপাওয়ারগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় স্থানান্তরিত হবে।
এশিয়ায় চীনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ভারত অবশ্যই ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম পছন্দ হবে। তাছাড়া, সকলেই জানে যে মোদি এবং ট্রাম্পের মধ্যে একটি চমৎকার বন্ধুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তুলেছে।
সাম্প্রতিক বন্যা, যা জনগণ ভারতকে দোষারোপ করেছে এবং ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের সেভেন বোনের মন্তব্য কোনো কাজে আসেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীরা দাবি করছে যে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার জন্য বাংলাদেশকে জবাবদিহি করতে হবে এবং অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে।ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশকে ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে তবে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। এই ভারসাম্য বিপর্যস্ত হলে তা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে প্রধান রপ্তানি গন্তব্য এবং বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগের উৎস। যুক্তরাষ্ট্র তার সুরক্ষাবাদী আইন মেনে চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে, যা বাংলাদেশের RMG (রেডি-মেড গার্মেন্ট) রপ্তানির জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেমিট্যান্স উৎস। ট্রাম্প তার প্রথম প্রশাসনে কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিলেন, এবং দ্বিতীয়বারের মতো তিনি একই কাজ করতে পারেন। এর ফলে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। এর পাশাপাশি, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে অর্থনৈতিক সংকট বাংলাদেশের উন্নয়নকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত করবে, এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এমন পরিস্থিতি থেকে সুবিধা লাভের সম্ভাবনাকে কঠিন করে তুলবে।
বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সুবিধাজনক অবস্থান ট্রাম্পের ভূ-রাজনৈতিক কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, যদি আঞ্চলিক নিরাপত্তা একটি প্রধান লক্ষ্য থাকে। প্রথম প্রশাসনের সময় তার লক্ষ ছিলো,নিরাপত্তার জন্য বন্ধুদের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো এবং বিদেশে আমেরিকান সামরিক প্রতিশ্রুতি কমানো। বাংলাদেশ নিরাপত্তা সহায়তা পেতে পারে, বিশেষ করে সন্ত্রাসবিরোধী এবং সমুদ্র নিরাপত্তা ক্ষেত্রে। বাংলাদেশকে অবশ্যই এই উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিয়ে পরিচালনা করতে হবে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়াই ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর মনোনিবেশ করা উচিত। বাংলাদেশের উচিত ওয়াশিংটনের মতাদর্শকে চ্যালেঞ্জ না করে এবং তার স্বার্থ রক্ষা না করে যথাসম্ভব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করা।এছাড়াও, বাংলাদেশের উচিত হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কোনও ধরনের সামরিক জোট এড়িয়ে চলা, কারণ এটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
লেখক: এ কে এম ফয়সাল
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন: