হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মেম্বার পদপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুইবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত জনপ্রিয় ইউপি সদস্য নুরুল হাসান। ভোট গণনার পর দেখা যায় তিনি মাত্র এক ভোটে পরাজিত হয়েছেন। ওই সময় থেকে তিনি ফলাফলে কারচুপি করে তাকে হারিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেন।
এক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইসলাম উদ্দিনকে। পরাজয় দেখানো প্রার্থী ভোট পুনরায় গণনার আবেদন জানিয়ে হবিগঞ্জ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।
আদালত দীর্ঘ দেড় বছর নানারকম তদন্ত যাচাই-বাছাই শেষে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে ভোট পুনরায় গণনার আদেশ দেন। উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পালের আদালত কক্ষে পুনরায় ভোট গণনা করা হয়।
ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, এক ভোটে পরাজিত প্রার্থী নুরুল হাসান ৫৩৩ ভোটে বিজয়ী। দীর্ঘ সময়ের শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, দলিল দস্তাবেসের যাচাই বাছাইয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মকর্তাদের নানা অসঙ্গতি ও ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্র সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।
নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পাল এক ভোটে বিজয়ী ঘোষিত প্রার্থী ইসলাম উদ্দিন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম, দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও কারচুপির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফকর উদ্দিনকে সন্দেহাতীতভাবে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর আদেশের কপি প্রেরণ করেন।
নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পাল বিস্ময় প্রকাশ করে রায়ে উল্লেখ করেন, ৫৩৩ ভোট বেশি পাওয়া প্রার্থীকে এক ভোটে পরাজিত দেখানো হয়েছে। ভোট গণনায় মানবিক ভুল থাকা স্বাভাবিক হলেও এত বিশাল ভোটের ব্যবধান কোনো স্বাভাবিক নয়।
চলতি সপ্তাহের রোববার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রেজাউল হক উভয়পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে শুনানি শেষে নিম্ন আদালতের রায় হবহু বহাল রাখেন। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে চূড়ান্তভাবে নুরুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মতিউর রহমান নির্বাচনি কারচুপিতে জড়িত সহকারী শিক্ষক ফখরুদ্দিন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম, পোলিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এখনো কেনো ফৌজদারি মামলা হয়নি তা জানতে চান।
বিজয়ী ঘোষিত নুরুল হাসানের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ইসলাম উদ্দিন ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করা হবে বলে আদালতকে জানান।
আরও পড়ুন: