তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার মতপ্রকাশ, সমাবেশ, এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। আমাদের সরকার গণমাধ্যমের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।
তিনি আরও দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছরের ইতিহাসে জনগণ ও গণমাধ্যম এমন স্বাধীনতা ভোগ করেছে কি না তা আমাদের জানা নেই।
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের পর নতুন নীতিমালা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তথ্য উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, এর আগে সাইবার নিরাপত্তা আইন রাজনৈতিক মতবিরোধ দমন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করতে ব্যবহৃত হতো।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশে ১৬ বছর স্বৈরাচারী শাসন থাকায়, দেশবাসীর অনেক কথা ও দাবি জমা ছিল। বর্তমানে তারা সেগুলো প্রকাশ করতে পারছে। তারা যা বলতে চায়, তাই বলতে পারে সেই পথ তৈরি করার চেষ্টা করছি আমরা।
এখনি সব দাবি পূরণ করতে না পারলেও সকল যৌক্তিক দাবি বিবেচনায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বর্তমান সরকারের উপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানন।
সরকার ১০০ দিনে অফিস সংস্কার, কর্মকর্তাদের রদবদল ও পরিকল্পনা তৈরিতে ব্যস্ত থেকেছে বলেও জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, শহিদ ও আহত সাংবাদিকদের জন্য মন্ত্রনালয়ের সহযোগী সংগঠন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আরথিক সহায়তা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে।
সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার মান উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি জানান, মিডিয়া সংস্কার কমিশন একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করবে, আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিষয়ে নাহিদ বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি যত দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়। আমরা আশা করছি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দেশের জনগণ বিচারের প্রমাণ পাবে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ইতোমধ্যে ৩৫০ সাংবাদিককে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে এবং সাংবাদিকদের মেধাবী সন্তানদের বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে বলেন জানান তিনি।
জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের প্রমাণ সংগ্রহ এবং তা নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতার, এবং পিআইবিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্যাসিবাদ ও বৈষম্যবিরোধী তথ্যচিত্র ও আলোচনা অনুষ্ঠানের কিছু কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে ও কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) সম্প্রতি ‘আগামীর বাংলাদেশ,’ ‘ফ্যাসিবাদের ডায়েরি,’ ‘দমনের উপাখ্যান’ ও ‘শহিদ পরিবারের আর্তনাদ’ এবং ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদী সরকারের দমন-পীড়ন ও দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে একাধিক বিশেষ অনুষ্ঠান এবং তথ্যচিত্র সম্প্রচার করেছে, যেখানে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনা তুলে ধরা হয়েছে।
দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের চেতনা ছড়িয়ে দিতে দেশব্যাপী গণযোগাযোগ বিভাগ মাইকিং, ৫২৭টি তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং ১১৯টি উঠান বৈঠক এবং ১৭৩টি সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজনের ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে।
পিআইবি গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা সম্পর্কিত একটি জার্নাল নিরীক্ষার দুটি সংস্করণ প্রকাশ করবে জানিয়ে নাহিদ বলেন, এতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তৃতা এবং মিডিয়া ও সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে এবং শহিদ ছাত্রদের ওপর ২০টি ফিচার স্টোরি, গ্রাফিতি অভ্যুত্থান ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ছাত্রদের ভূমিকা প্রকাশ করা হবে।
বাংলাদেশ সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই) মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ‘বৈষম্যমুক্ত ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে বিসিটিআইয়ের কার্যক্রম’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।
ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দুর্নীতি, দমন, বলপূর্বক গুম, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রাজনীতিকরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, নির্বাচনী ব্যবস্থার ধ্বংস, সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ যাবতীয় অপকর্মের তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা বিভাগকে (ডিএফপি) নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: