বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় আজ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রায় নিয়ে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে অবৈধভাবে তারেক রহমানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সাজা দিয়েছিল। আপিল বিভাগ যথার্থ রায় দিয়েছেন।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তারেক রহমান ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের জোরপূর্বক রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে সাজা দেওয়ার মানসিকতা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের।
তিনি আরও বলেন, ন্যায়বিচারের জন্য বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রতিফলন হয়েছে আজ।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার পতন হজম করতে পারছে না ভারত সরকার। শেখ হাসিনার পতনে তাদের অন্তরে ভয়ংকর অনল দহন। অপপ্রচারে মেতেছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি ও তার সহযোগীরাও। ভারতের এই আচরণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে হুমকি।
রিজভী বলেন, অতিমাত্রায় দাদাগিরি করার ফলে ভারতের সঙ্গে তার প্রত্যেক প্রতিবেশীর সম্পর্ক তলানিতে। শুধু হাসিনার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিল বাংলাদেশের ওপর। ভারত বাংলাদেশকে আশ্রিত রাজ্যের মতো বিবেচনা করতো। সেই আশ্রিত রাজ্য হাত ফসকে গেছে। বিগত ১৫ বছর হাসিনাকে সামনে রেখে ভারত বাংলাদেশকে কার্যত: দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশকে আবার কীভাবে তাদের করতলে নেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যেই তারা নীলনকশা করছে। ভারতের সরকার মনে করে, বাংলাদেশকে অষ্টম সিস্টার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তাদের সেভেন সিস্টার্স নিরাপদ থাকবে। চানক্য ভারতের বশংবদ ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ও পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই মোদি ও তার গদি মিডিয়া বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্র এবং অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তারা চরম হতাশা-আহাজারিতে নিমজ্জিত। তাদের আচরণ ক্রমশ: স্পষ্টত: অসুপ্রতিবেশীসুলভ, অস্বাভাবিক এবং একদেশদর্শী। একজন স্বৈরাচারের পতন নিয়ে কোনো দেশের এমন আহাজারি বিশ্বে বিরল। ভারতের কতিপয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বানোয়াট গল্প প্রচার ও প্রোপাগান্ডা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে চলেছে। ভারতীয় সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী ও হাসিনার যৌথ ইন্ধনে ভারতীয় কিছু উগ্র হিন্দত্ববাদী গণমাধ্যম এমন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ভারত সকল বাংলাদেশিদের স্বার্থে কথা না বলে সব সময় শুধুমাত্র একটি সম্প্রদায়ের স্বার্থে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কথা বলে। ভারতের এই আচরণ ভারতকে সার্বজনীন না করে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের পক্ষাবলম্বী করেছে। ভারতের এসব আচরণ এদেশের সাধারণ মানুষ মেনে নেয়নি। এদেশের মানুষ কঠিন সময়ে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে জানে। প্রতিরোধের দুর্ভেদ্য দেয়ালও প্রতিষ্ঠা গড়ে তুলতে পারে। এদেশের হিন্দুদেরও বৃহদাংশ ভারতের এই নীতি সমর্থন করে না। আজ এই বাস্তবতা ভারতকে বুঝতে হবে। অসুয়া শক্তির কখনো জয় হতে পারে না।
রিজভী আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ কেউ তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে বিএনপি প্রতিবন্ধক বলে প্রচার করছেন যা সঠিক নয়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা, না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সরকারের। বিএনপির ওপর দায় চাপানো দুঃখজনক। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার যখন জামায়াত নিষিদ্ধ করেছিল তখন আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমরা আশা করবো, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টাদের এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া উচিত হবে না যাতে গণতন্ত্রিক শক্তি দুর্বল হয় বা আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: