
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের ইতিহাসে দীর্ঘ ১৬ বছর একচেটিয়া দেশ শাসন করেছে। সর্ব দলীয় নির্বাচনকে তোয়াক্কা না করে, লোক দেখানো নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করে জনগণের সামনে হয়েছে স্বৈরাচার। নিজেদের পতনের হাত থেকে বেঁচে থাকতে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নির্বাহী আদেশে অবৈধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের আরেকটি রাজনৈতিক দল জামায়াত ইসলামীকে। আন্দোলন তো দূরে থাক, কখনো মাজা সোজা করে দাঁড়াতেই দেয়নি এই দলটিকে।
বিএনপি ১৬ বছর যাবত রাজপথে কিছুটা আন্দোলন সংগ্রাম করলেও পতন তো দূরের কথা, উল্টো মামলা হামলায় জর্জরিত হয়ে ঘরবাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে দলটির নেতা-কর্মীদের। অবশেষে ৪ জুলাই থেকে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। যা পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ৫ আগষ্ট সরকার পতনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।
এরপরই নড়েচড়ে বসে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। তবে ৫ আগষ্ট থেকেই অবৈধ দখল, টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, হামলা, মামলা, মাদক ব্যবসা, ভাঙচুরের মতো অভিযোগ আসতে শুরু করে আরেক বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির বিরুদ্ধে। খুলনা বিএনপিও এর বাইরে নয়। অভিযোগের তীর ছুটে গেছে দলটির স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অভিযোগ এসেছে অনেক।
দলীয় এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পরপরই বিএনপি কর্তৃক শুরু হয় হামলা, মামলা, ভাংচুর, অবৈধ দখল, টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী। এমনকি যেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ১৬ বছর তারা আন্দোলন করেছে সেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের রক্ষা করতে তাদের কাছ থেকেও বিপুল চাঁদাবাজী করার অভিযোগ পাওয়া যায় খুলনা বিএনপির বেশকিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।
যা নজরে আসে কেন্দ্রসহ স্থানীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে শুরু হয় দলীয় পদক্ষেপ। শোকজ নোটিশ আর বহিষ্কার করা হয় বেশকিছু নেতাকর্মীকে। তবে এরা একেবারেই তৃণমূল পর্যায়ের।
শীর্ষ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দলীয় কোনো পদক্ষেপ এখনো গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে দলের অভ্যন্তরেই। এতে ক্ষোভে ফুসছেন সাধারণ নেতা-কর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিএনপির একটি অংশ নেতৃত্ব পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।
খুলনা মহানগর বিএনপির দফতর সম্পাদক মোঃ শরিফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার কোনো ভিত্তি নেই।’ খুলনা সদর থানায় দায়ের করা পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরীতে তিনি এমন কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও কুৎসা মূলক লেখালেখি চলছে, যে কারণে বিএনপি সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। উক্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিরা অব্যাহতভাবে প্রায় প্রতিনিয়ত আমাদের দল ও নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ লেখা ও ছবি পোষ্ট করে চলেছে।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সদ্য ভেঙ্গে দেয়া জেলা বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের দখলবাজী। সেইসাথে নগর বিএনপিরও কয়েকজন শীর্ষ পদধারী নেতা রয়েছেন এই তালিকায়।
তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছেন, খুলনায় ছাত্রদল, যুবদল ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হলেও এতো অভিযোগের পরেও নগর কমিটি রয়েছে বহাল তবিয়তে।
এ ব্যাপারে খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় দল। তাই এখানে দলাদলী থাকবে। যারা পদপদবী থেকে বঞ্চিত তারা এসব কুৎসা রটাচ্ছে।’
তবে তিনি দখলবাজী, টেন্ডারবাজী, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজীর সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে খুলনা মহানগর বিএনপি কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।’
অপরদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের পর খুলনায় নিজেদের ঘর গুছিয়ে নেয়ার কাজ করে চলেছে জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী সরকারের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল ছিন্ন করে বেরিয়ে এসে স্বদর্পে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। সাংগঠনিক, সামাজিক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে চলছে তাদের দল গোছানো প্রক্রিয়া এবং এখন পর্যন্ত খুলনায় বেশ গোছালো পরিপাটি তারা। নেই কোনো দখল, লুটপাট, চাঁদাবাজি বা মাদক ব্যবসায় জড়ানোর অভিযোগ। তাদের সেই কাজ আরও বেশি সহজ হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নিজ জেলা হওয়ায়।
ইতোমধ্যে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানও গত ৩ মাসে একাধিক সফর করেছেন খুলনাতে। এতে করে নেতা-কর্মীরা আরও বেশি চাঙ্গা হয়েছেন।
আওয়ামী সরকার পতনের পর অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচন চাইলেও জামায়াতে ইসলামী চাইছে সংস্কার শেষে নির্বাচনে যেতে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা সেইভাবে কাজ করে চলেছেন।
খুলনা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল বলেন, ‘জামায়াত তার নিজ গতিতে এগিয়ে চলেছে। এতোদিন জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে না পারলেও নিজেদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ঠিকই পরিচালনা করেছে। জামায়াত চায় সুস্থ্য ধারার রাজনীতি, জামায়াত শান্তিকামী। এরা কোনো নৈরাজ্য, অস্থিতিশীল রাজনীতি সমর্থন করে না। তাই জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীরা কখনো অবৈধ দখল, চাঁদাবাজী, মাদক ব্যবসাকে সমর্থন করে না এবং ভবিষ্যতেও করবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই আমরা কাজ করছি। ইনশাআল্লাহ আমরা বিজয়ী হবো।’
তাই বলাই যায়, খুলনায় বিএনপি অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগে পিছিয়ে পড়লেও বেশ ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে জামায়াত।
আরও পড়ুন: