রবিবার

২০ এপ্রিল, ২০২৫
৭ বৈশাখ, ১৪৩২
২২ শাওয়াল, ১৪৪৬

কুড়িগ্রামের রাজীবপুর সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৬:৩৩

শেয়ার

কুড়িগ্রামের রাজীবপুর সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিস, যার কেন্দ্রে রয়েছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন। এ অফিসের কার্যক্রম যেন শুধুই দুর্নীতির একচ্ছত্র আধিপত্যে পরিচালিত। হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী, বিধবা এবং বয়স্ক ভাতাভোগীদের প্রাপ্য অধিকার হরণ করে নিজের স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত ওই কর্মকর্তা।

সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তিনি নিজের নিয়মে অফিস পরিচালনা করেন। "ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা" হওয়ার অজুহাতে মাসে এক বা দুই দিন অফিস করেন, আবার কোনো কোনো মাসে একবারও অফিসে আসেন না তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, মাসে মাত্র দুই-একবার অফিসে আসলেও, প্রয়োজনীয় ফাইল রৌমারী উপজেলা কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে তার স্বাক্ষর করাতে হয়, কারণ তিনি সেখানেই দায়িত্বে রয়েছেন।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজীবপুর উপজেলার ৭০টি প্রতিবন্ধী ভাতার নাম জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের বাসিন্দাদের দেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত। এসব নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মধ্যস্থতাকারী শাহিনার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই ইউনিয়নের ৩৩১ জনের কাছ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য ৫ হাজার টাকা করে মোট অর্থ সংগ্রহ করে সমাজসেবা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিনের কাছে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৭০ জন ভাতা পেলেও বাকিরা কিছুই পাননি। ভাতা না পাওয়া ব্যক্তিরা টাকা ফেরত চাইলে, ভাতা প্রাপ্তদের নামও কেটে দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

শাহিনা আরও অভিযোগ করেন, "ছাগলের প্রকল্পের নাম করে সমাজসেবা কর্মকর্তা ও তানিয়া নামের এক সমাজকর্মী আমার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়েছেন। টাকা ফেরত চাইলে নানা টালবাহানা করছেন তারা।"

স্থানীরা জানায়, রাজীবপুর সমাজসেবা অফিসে বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, বিধবা, শিক্ষা, চিকিৎসা বা বেদে জনগোষ্ঠীর কোনো ভাতাই ঘুষ ছাড়া পাওয়া যায় না। এমনকি অফিস থেকে লোন পেতেও দিতে হয় মোটা অঙ্কের ঘুষ।

এক উপজেলার বরাদ্দ অন্য উপজেলায় যাওয়ার নিয়ম নেই। তাহলে কীভাবে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা রাজীবপুরের বরাদ্দের সুবিধা পেলেন? ছাগলের প্রকল্পের নামে টাকা নেওয়া হলো কেন? যেখানে সমাজসেবা অধিদপ্তরে কোনো ছাগলের প্রকল্পই নেই। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা সমাজসেবা (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন বলেন, "ভুলবশত নামগুলো তালিকাভুক্ত হয়েছে। যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পাইনি।" ঘুষের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি দায় চাপান তৎকালীন রাজীবপুর অফিসের সমাজকর্মী তানিয়ার ওপর।

তানিয়া অবশ্য দাবি করেছেন, "স্যারের (মিনহাজ উদ্দিন) নির্দেশেই আমি টাকা নিয়েছি এবং সেই টাকা তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি।"

অফিসে ছাগলের প্রকল্প নেই বললেও, ঘুষের অভিযোগের প্রতিবেদন না কারার জন্য সাংবাকিকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ কারার চেষ্টা করেন।

এবিষয়ে কুড়িগ্রাম সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহ. হুমায়ুন কবির বলেন, অভিযোগ দিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।

সেবা গ্রহীতার সমাজসেবা অফিসের দুর্নীতি বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা জানান "দরিদ্র ও অসহায় মানুষের ভাতা নিয়ে এভাবে অনিয়ম মেনে নেওয়া যায় না।

banner close
banner close