বৃহস্পতিবার

২১ নভেম্বর, ২০২৪
৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
১৯ জামাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৮:২৩

আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:১৫

শেয়ার

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী
প্রতীকী ছবি।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাতের পবিত্র স্মৃতি বিজড়িত দিন ১২ রবিউল আউয়াল, যা সমগ্র বিশ্বের ২০০ কোটির বেশি মুসলিম উম্মাহ কাছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। জাজিরাতুল আরবে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নেন সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।

সোমবার মুসলিম বিশ্বের সকল দেশের মতো বাংলাদেশেও সরকারি ও ব্যক্তিগত নানা ধর্মীয় কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যথাযথ ভাব-গাম্ভীর্যের সঙ্গে দিবসটি পালিত হবে। পবিত্র এই দিনটিকে বিশেষ কল্যাণকর হিসেবে বিবেচনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। 

মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর জন্মের আগে গোটা আরব বিশ্ব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। ওই সময় আরবের মানুষ মহান আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। তাই এই যুগকে বলা হয় ‘আইয়্যামে জাহেলিয়া’। তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করত।

এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহ তায়ালা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দুনিয়ায় পাঠান। অতি অল্প বয়সেই মহানবী (সা.) আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। 

পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী (সা.) মক্কায় বিবি খাদিজা নামের এক ধনাঢ্য মহিলার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়্যাতপ্রাপ্ত হন। আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভ করেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, “আমি আপনার আলোচনাকে বুলন্দ করেছি।” কতটুকু বুলন্দ? এতটুকু যে মহান আল্লাহ তা‘আলা তার নাম মুবারকের সাথে দরূদ সংযুক্ত করে দিয়েছেন।

জাহেলিয়াতের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়া বিশ্বমানবতার মুক্তির একমাত্র দূত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পৃথিবীর বুকে শুভ আগমনে মাস এই রবিউল আউয়াল। মাতৃ গর্ভ থেকে তিনি দুনিয়াতে আসার মুহূর্তেও ছিলেন পুত-পবিত্র এবং খতনা করা অবস্থায়।

রাসূল (সা.) ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই পবিত্রতা, ঈমানী জ্যোতি ও আখলাকের সুবাস ছড়িয়ে গেছেন পূর্ণাঙ্গ তেষট্টি বছরের হায়াতে জিন্দেগিতে। আল্লাহপাক কোরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।

এক সাহাবীর প্রশ্নের জওয়াবে রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন সোমবার আল্লাহপাক আমাকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন, যে কারণে আল্লাহপাকের শোকর আদায়ের স্বরূপ সোমবারে আমি রোজা রাখি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম থেকে ওয়াফাত পর্যন্ত তার প্রত্যেকটা আমল অনুসরণ অনুকরণ দুনিয়া ও আখেরাতে আমাদের কামিয়াবির একমাত্র মাধ্যম।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সোমবার সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। 

বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করে থাকে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিস্তারিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।

রোববার বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব গেটে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেছেন।

অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, সেমিনার, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত মাহফিল, হামদ-নাত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ইসলামি ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, ইসলামি বইমেলা, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ।

এ ছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪টি ইসলামিক মিশন ও ৮ টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।