
পার্থিব দুনিয়ায় মানুষ মানুষের সহযোগী। বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে দাঁড়াবে এমনটাই দাবি মানবতার। ইসলামে পরোপকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।আর মানবিকতা ও ঈমানের মধ্যে বন্ধুত্ব আছে। পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি জানো, বন্ধুর গিরিপথ কী? এটা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে আহার দেওয়া এতিম আত্মীয়কে বা দারিদ্র্য-নিষ্পেষিত নিঃস্বকে। এর পরই সে হবে ঈমানদারের অন্তর্ভুক্ত...। (সুরা : বালাদ, আয়াত : ১২-১৭)।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য নিবেদিত এমন অনেক বান্দা আছে যাদেরকে আল্লাহ তাআলা মানুষের উপকার করার জন্য বিশেষ নিয়ামত দান করেন। যতক্ষণ তারা সেগুলো মানবকল্যাণে ব্যয় করে ততক্ষণ তিনি তাদের সেসব নিয়ামতের মধ্যে বিদ্যমান রাখেন। কিন্তু যখন তারা সে উপকার করা বন্ধ করে দেয়, তখন তিনি তাদের থেকে নিয়ামত ছিনিয়ে নিয়ে অন্যদের দিয়ে দেন। (সহিহুত তারগিব, হাদিস : ২৬১৭)। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই, সে তার ওপর জুলুম করবে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে যাবে না।
যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনে তার কষ্টগুলো থেকে একটি কষ্ট দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন। (বুখারি, হাদিস : ২৪৪২)। আল্লাহ তাআলা মানুষের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা যার হাতে দিয়েছেন অথবা যার নেতৃত্বে কিংবা যার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন পূরণ হতে পারে, সে যদি তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নেয় তাহলে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তার যে বান্দাকে কোনো নিয়ামত পরিপূর্ণরূপে দান করেন এবং তারপর লোকদের প্রয়োজন তার দিকে যোগ করে দেন, কিন্তু সে তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার এমন আচরণের ফলে সে ওই নিয়ামত হাতছাড়ার ব্যবস্থা করে। (তাবারানি, আওসাত, হাদিস : ৭৫২৯; সহিহুত তারগিব, হাদিস : ২৬১৮)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদিসে পরোপকারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। এখানে পরোপকারের ফজিলত সম্পর্কিত ৪টি হাদিস তুলে ধরা হলো : আল্লাহর দয়া। পরোপকার সম্পর্কে রাসূল সা. বলেছেন, ‘তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের মালিক আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৪৭)।
কারো অভাব দূর করলে আল্লাহ স্বাচ্ছন্দ্য দান করেন। আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়াবি সমস্যাগুলোর একটি সমাধান করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তার আখিরাতের সংকটগুলোর একটি মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালাও তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-গুণ গোপন করবে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৯৯)।
পরিশেষে বলতে চাই, সুন্দর এ বসুন্ধরায় মানুষের জীবন কতই না বিচিত্র। সমাজ-সভ্যতা, জাতি-গোষ্ঠি, সাদা-কালো মূর্খ জ্ঞানী ইত্যাদি প্রকার প্রকারণে মানুষের মন মানসিকতা ও আচার-আচরণ আরও বৈচিত্র্যের। এ বৈচিত্র্যের নতুন সমন্বয় ঘটে বিশ্বাস নামক এক শক্তি। এ বিশ্বাস ও শক্তি মানুষের মাঝে অনাগত দিনের আশার আলো সঞ্চয় করে এবং বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়। পৃথিবীর বুকে মানুষের সংখ্যা দিন-দিন যতই বাড়ছে মানুষে- মানুষে বিভেদ ও ভিন্নত রোগ-ব্যাধি দারিদ্র বঞ্চনাসহ নানা সমস্যা ততই সম্প্রসারিত হচ্ছে। এসব ভিন্নতর প্রকার ও প্রকরণের সমস্যার অবসানে প্রয়োজন আমাদের চারিত্রিক ও নৈতিক মূল্যবোধ। সব মানুষ এক হয়ে আর্তমানবতার সেবায় একই সূত্রে গাথা হোক এটা আজকের সমাজ জীবনে মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য একথা একেবারেই ভুলে গেছি।
আরও পড়ুন: