![গুগলের নীতিমালায় পরিবর্তন, সামরিকখাতে এআই’র ব্যবহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা গুগলের নীতিমালায় পরিবর্তন, সামরিকখাতে এআই’র ব্যবহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা](./assets/news_images/2025/02/12/21.jpg)
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নতি ও ব্যবহারের প্রেক্ষাপটে যে কয়েকটি বিষয় প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের ভাবাচ্ছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক ব্যবহার। বিশেষ করে অস্ত্র ও বেআইনি নিজরদারিতে উন্নত এই প্রযুক্তির ব্যবহার বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকিস্বরুপ বলে মনে করেন অনেকেই। তবে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাঝেও এআই’র ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে শীর্ষ এআই প্রতিষ্ঠানগুলোও নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে এগিয়ে চলেছে এআই নিয়ে।
এই যেমন গত সপ্তাহে গুগল নীরবে-নিভৃতে তাঁদের এআই নীতিমালায় তাৎপর্যপূর্ণ এক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। নতুন এই পরিবর্তনের ফলে অস্ত্র ও নজরদারিতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার না করার অবস্থান থেকে সরে এসেছে গুগল। বিষয়টি ঘটা করে ঘোষণা না করলেও গুগল স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ২০১৮ সালে প্রণীত তাঁদের এআই নীতমালায় যে দিকনির্দেশনার উল্লেখ আছে সেটা মেনে তাঁরা আর চলতে পারছে না।
২০১৮ সালে গুগলের এআই নীতিমালায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি ছিল- যেগুলো এবার সরিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক এআই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কিত গুগলের সরিয়ে নেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো:
১। যেসব প্রযুক্তির কারণে সাম্রগ্রিকভাবে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে, বা ক্ষতি হয়।
২। এমন অস্ত্র বা অন্যান্য প্রযুক্তি যার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের ক্ষতি করা বা ক্ষতি হয় এমন কাজকে ত্বরান্বিত করা।
৩। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম লঙ্ঘন করে নজরদারির উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ বা ব্যবহার করে এমন প্রযুক্তি।
৪। এমন প্রযুক্তি যার উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নীতির লঙ্ঘন করে।
আমেরিকার বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুগলের এআই নীতিমালায় সাম্প্রতিক এই পরিবর্তন আরও বেশি অর্থবহ হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এআই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কিত নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালা তিনি অনেক বেশি শিথিল করতে চলেছেন।
এরই মধ্যে তিনি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এআই সম্পর্কিত একটি নির্বাহী আদেশকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। উক্ত নির্বাহী আদেশের উদ্দেশ্য ছিল এআই প্রযুক্তির নিরাপদ, সুরক্ষিত ও বিশ্বস্ত উন্নয়ন ও ব্যবহার নিশ্চিত করা।
তবে প্রযুক্তিখাতে গুগলের এমন সিদ্ধান্ত একেবারেই ব্যতিক্রম কিছু নয়। বরং বলা চলে, এআই প্রযুক্তিকে যেমন-ইচ্ছে-তেমন ব্যবহারের এক প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে বিগ টেক প্রতিষ্ঠানগুলো। এটাই যেন নিয়ম, ব্যতিক্রম হচ্ছে এই স্রোতে গা ভাসিয়ে না দেওয়া। মূলত সামরিকখাতে এআই অ্যাপ্লিকেশন তৈরির বাজার ধরতে উন্মুখ আজকের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।
গত নভেম্বরে সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট মেটা ঘোষণা করে যে, আমেরিকার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তাখাতে যুক্ত বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাঁরা নিজেদের লামা এআই মডেলটি ব্যবহারের সুযোগ করে দিবে। অথচ মেটার নিজস্ব নীতিমালাতেই উল্লেখ আছে, সামরিক, যুদ্ধ ও পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কিত শিল্প বা অ্যাপ্লিকেশনে লামা মডেলটি ব্যবহার করা যাবে না।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাইডেন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ওপেনএআই’র মতো শীর্ষস্থানীয় এআই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের সাথে এআই প্রযুক্তির উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। সরকার সে সময় একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের ঘোষণা দেন যার কাজ হবে ডেটা সেন্টার তৈরির কাজে সমন্বয় সাধন করা। পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও জাতীয় সুরক্ষা এবং পরিবেশগত লক্ষ্যের কথাও বিবেচনা করা। তার এক মাস পরই সরকার কর্তৃক প্রকাশিত একটি মেমোতে জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত লক্ষ্য পূরণে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি উঠে আসে। আর তাতেই বিগ টেক প্রতিষ্ঠানগুলো সামরিক খাতে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে উৎসাহী হয়ে উঠে।
আরও পড়ুন: