
স্মার্টফোনের বাজারে ২০২৫ সাল যেন হতে চলেছে আলট্রা-থিন বা অতি পাতলা ফোনের বছর। স্যামসাং ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে, বছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টারেই (এপ্রিল-জুন) তাঁরা নিয়ে আসছে গ্যালাক্সি এস২৫ এজ আলট্রা-থিন স্মার্টফোনটি। অ্যাপলের আইফোন ১৭ এয়ার মডেলটি নিয়ে আসার সম্ভাবনাও জোরাল। এরই মধ্যে বাজিমাৎ করে দেখাল চীনের স্মার্টফোন নির্মাতা টেকনো মোবাইল। পেন্সিলের চেয়েও পাতলা (স্লিম) একটি স্মার্টফোন নিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। টেকনোর ‘স্পার্ক স্লিম’ ফোনটিকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা ফোন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
টেকনোর স্পার্ক স্লিম ফোনটি সম্প্রতি (৩ থেকে ৬ মার্চ) বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে (এমডব্লিউসি) প্রদর্শিত হয়েছে। প্রযুক্তি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ এই কনজ্যুমার শো’তে উপস্থিত দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে পেরেছে টকেনোর অভিনব এই স্মার্টফোনটি। কী আছে এই ফোনে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
টেকনোর ‘স্পার্ক স্লিম’ স্মার্টফোনের বিশেষত্ব
আলট্রা-থিন ফোনের ট্রেন্ড যখন তুঙ্গে তখন স্মার্টফোন নির্মাতাদের অনেকেই পাতলা ফোন নিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। তবে টেকনোর স্পার্ক স্লিম ফোনটি যে এক্ষেত্রে অন্যদের ছাড়িয়ে গেছে তাঁর মূল কারণ দুটি। প্রথমত ফোনটির পুরুত্ব মাত্র ৫.৭৫ মিলিমিটার। দ্বিতীয়ত এই আলট্রা-স্লিম ডিজাইনেই ৫২০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার সক্ষমতার একটি ব্যাটারিকে জায়গা করে দিয়েছে টেকনো, যেটাকে প্রায় অবিশ্বাস্যই বলা যায়।
কতটা পাতলা এই ফোন?
ফোনটি কতটা পাতলা সেটা বোঝার জন্য বাজারের প্রচলিত জনপ্রিয় স্মার্টফোনগুলোর সাথে তুলনা করা যেতে পারে। টেকনো স্পার্ক স্লিম যেখানে মাত্র ৫.৭৫ মিলিমিটার (শূন্য দশমিক ২২ ইঞ্চি) পুরু সেখানে জানুয়ারিতে উন্মোচিত স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এস২৫ ফোনটি ৭.২ মিলিমিটার (শূন্য দশমিক ২৮ ইঞ্চি) পুরু (স্লিম বা থিন)। শুধু তাই নয়, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৫ সিরিজের আসন্ন ‘এজ’ মডেলের (৫.৮ মিলিমিটার) চেয়েও পাতলা টেকনোর স্পার্ক।
উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বরে উন্মোচিত অ্যাপলের আইফোন ১৬ ফোনটি ৭.৮ মিলিমিটার (শূন্য দশমিক ৩১ ইঞ্চি) পুরু। অর্থাৎ পাতলা ডিজাইনের দিক থেকে টেকনো ইতোমধ্যেই ছাড়িয়ে গেছে স্যামসাং ও অ্যাপলকে। আরও স্পষ্ট করে বললে, একটি পেন্সিলের চেয়েও স্লিম টেকনোর এই স্মার্টফোনটি।
ডিজাইন স্লিম হলেও, ব্যাটারি বড়
আলট্রা-থিন ফোনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এর ব্যাটারি ব্যাকআপ। ডিজাইন স্লিম বা পাতলা হওয়ায় এতে বড় আকারের ব্যাটারি দিতে পারেন না নির্মাতারা। তবে টেকনো এই চ্যালঞ্জে জয়ী হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ৫.৭৫ মিলিমিটার পুরু বডিতে ৫২০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ারের ব্যাটারি দেওয়ার কথা জানিয়েছে চীনের স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। আইফোন ও স্যামসাংয়ের সাথে তুলনা করলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
আইফোন ১৬ ফোনের ৭.৮ মিলিমিটার পুরু বডিতে আছে ৩৫০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার সক্ষমতার ব্যাটারি। স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এস২৫ সিরিজের মডেলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যাটারি ব্যাকআপ আছে এস২৫ আলট্রাতে, ৪৮৫৫ মিলিঅ্যাম্পিইয়ার আওয়ার।
টেকনো স্পার্ক স্লিম ফোনটির অন্যান্য ফিচারসমূহ
স্পার্ক স্লিম ফোনটি সম্পর্কে বিস্তারিত খুব বেশি কিছু জানায়নি টেকনো। মূলত কনসেপ্ট ফোন হিসেবেই মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে প্রদর্শিত হয়েছে ফোনটি। তবে ফিচার সম্পর্কে যতটুকু জানা গেছে তাতে করে এটা বলা যায় যে, বাজারে এলে স্মার্টফোনপ্রেমীদের জন্য বিশেষ করে আলট্রা-থিন ফোন কিনতে ইচ্ছুক গ্রাহকদের জন্য দারুন এক অপশন হয়ে উঠবে স্পার্ক স্লিম ডিভাইসটি।
ফোনটিতে আছে ৬.৭৮-ইঞ্চির অ্যামোলেড ডিসপ্লে, যেখানে ১২২৪ পিক্সেল রেজোলিউশন, ১৪৪ হার্জ রিফ্রেশ রেটের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ৪৫০০ নিটস ব্রাইটনেস উপভোগ করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। চমৎকার ডিজাইনের স্পার্ক স্লিম ফোনটির পেছন দিকে আছে ৫০ মেগাপিক্সেলের দুটি রিয়ার ক্যামেরা এবং সামনে আছে ১৩ মেগাপিক্সেলের একটি সেলফি ক্যামেরা।
আকর্ষণীয় ডিজাইন
ফোনটির বাহ্যিক কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে রিসাইকেল করা অ্যালুমিনিয়াম ও স্টেইনলেস স্টিলের ইউনিবডি। ফলে টেকনো স্পার্ক স্লিমের বডিতে নিজেদের চেহারার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন গ্রাহকরা! ফোনটি বডিতে আলো পড়লে সেটা প্রতিফলিত হয়ে জ্বলজ্বল করবে- এটাই কি তবে ‘স্পার্ক’ নামকরণের পেছনের কারণ? হতেও পারে, যদিও এ সম্পর্কে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিছু বলেনি।
স্পার্ক স্লিমের পেছনে আছে একটি ক্যামেরা আইল্যান্ড। বিস্তৃত এই ক্যামেরা বারের মধ্যে ৫০ মেগাপিক্সেলের দুটি ক্যামেরা সমান্তরালভাবে অবস্থান করছে। ক্যামেরা আইল্যান্ডটি মূল বডি থেকে কিছুটা বেরিয়ে থাকলেও স্লিম ডিজাইন হিসেবে ডিভাইসটির সৌন্দর্যহানি হয় না এতটুকুও।
দুটি ক্যামেরা মডিউলের চারপাশে রয়েছে বৃত্তাকার এলইডি লাইট। দুটি ক্যামেরার মধ্যবর্তী খালি জায়গায় একটি সমান্তরাল বারও রয়েছে। সার্বিকভাবে ফোনটির রিয়ার ক্যামেরা দুটির অবস্থান বেশ চমকপ্রদ।
চমকের অবশ্য এখানেই শেষ নয়। স্পার্ক স্লিমের ডিসপ্লের দু’দিকেই রয়েছে ডুয়াল-কার্ভড্ এজ। ডিভাইসটির পার্শ্ববর্তী অংশও কার্ভড্, যেখানে ফোনটির কাঠামোর পেছনের অংশটি মধ্যবর্তী অংশের সাথে মিলিত হয়েছে। এর ফলে ফোনটির ডিজাইন আরও পাতলা বা আলট্রা-থিন করা সম্ভব হয়েছে। বার্সেলোনা’য় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে যারা ফোনটি হাতে নিয়ে দেখার সুযোগ পেয়েছেন তাঁদের কয়েকজন জানিয়েছন যে, টেকনো স্পার্ক স্লিম ফোনটি হাতে বহন করতে বেশ আরামদায়ক মনে হয়েছে তাঁদের কাছে।
টেকনো স্পার্ক স্লিম বাজারে আসবে কবে?
যেমনটা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, টেকনোর এই আলট্রা-থিন ফোনটি এখনও পর্যন্ত কনসেপ্ট ফোনের পর্যায়েই রয়েছে। কবে নাগাদ ফোনটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে, কিংবা বাজারে আসার সম্ভাব্য টাইমলাইন সম্পর্কে কিছুই জানায়নি টেকনো। উৎপাদন শুরু হতে হতে সকল ফিচার বজায় রেখে প্রদর্শিত ডিজাইন অনুযায়ী ৫.৭৫ মিলিমিটার পুরু ফর্ম ফ্যাক্টর তাঁরা ধরে রাখতে সক্ষম হবে কি-না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: