বুধবার

১৬ এপ্রিল, ২০২৫
৩ বৈশাখ, ১৪৩২
১৮ শাওয়াল, ১৪৪৬

মুজিব শতবর্ষে বিসিবি থেকে সরানো হয়েছে ১৯ কোটি টাকা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১৭:৪৬

আপডেট: ১৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১৭:৫১

শেয়ার

মুজিব শতবর্ষে বিসিবি থেকে সরানো হয়েছে ১৯ কোটি টাকা
ছবি : বাংলা এডিশন

মঙ্গলবার সকাল থেকে তেমন ব্যস্ততা ছিল না মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। দুপুর ১২টা বাজতেই হঠাৎ সাড়া পড়ে গেল চারিদিকে। বিসিবি কার্যালয়ের সামনে গাড়ি থেকে নামলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তিন সদস্য। পরে জানা গেল, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনায় এসেছেন তারা।

বিসিবির বিভিন্ন বিভাগে প্রায় দেড় ঘণ্টার অভিযানের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনটি অভিযোগ নিয়ে কাজ করার কথা জানান দুদকের সহকারী পরিচালক আল আমিন। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরি বলেন, বোর্ডের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে বিভিন্ন ক্রিকেট লিগের বাছাইপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ অর্জনসহ নানাবিধ দুর্নীতি ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট অভিযানের নিমিত্তে টিম প্রেরণ।”

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে আল আমিন জানান, বাকি দুটি অভিযোগ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) টিকেট বিক্রির আয়ে অসঙ্গতি ও মুজিব শতবর্ষে অর্থ আত্মসাত সম্পর্কিত।

প্রায় দশ বছর পর এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগ। ২০১৪-১৫ মৌসুমে এই লিগে খেলার ফি ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হলে ক্রমেই কমতে থাকে দলের সংখ্যা। গত কয়েক বছরে ৫টির বেশি দল ছিল না এই লিগে।

তবে এবার আবেদন ফি কমিয়ে করা হয়েছে ১ লাখ টাকা। এর সঙ্গে শিথিল করা হয়েছে কিছু শর্ত। যার ফলে এবারের বাছাই লিগে অংশ নিয়েছে ৬০টি দল।বাছাই লিগের আবেদন ফি বাড়ানো, দলের অংশগ্রহণ কমার পেছনে বোর্ডের বা ব্যক্তিগত কোনো প্রভাব ছিল কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হবে বললেন আল আমিন।

সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি বিসিবির প্রধান নির্বাহী।

“তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগে এবার ৬০টি দল অংশ নিয়েছে। আগে ২-৩ বা সর্বোচ্চ ৪ দলের লিগ হতো। এখানে হয়তো কোনো কারণ আছে। আমরা কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি, এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বা বোর্ডের কোনো প্রভাব ছিল কিনা দেখার জন্য। এমনিতেই বোঝা যাচ্ছে, আগে হয়তো অংশগ্রহণের স্বাধীনতা ছিল না, কোনো চাপ ছিল, যে কারণে দলগুলো আসত না। আমরা বিস্তারিত যাচাইবাছাই করে বুঝতে পারব এখানে কী অসঙ্গতি ছিল।”

বিপিএলের সবশেষ আসর শেষে বিসিবি সভাপতি ও টুর্নামেন্টের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, টিকেট বিক্রি করে তারা সব মিলিয়ে ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা আয় করেছেন। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, বিপিএলের প্রথম ১০ আসরে টিকেট থেকে মোট ১৫ কোটি টাকা পেয়েছিল বিসিবি।টিকেট বিক্রির আয়ে এই অস্বাভাবিকতা নিয়ে কাজ করার কথাও বললেন দুদকের সহকারী পরিচালক।

“আগে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ নিয়ে টিকেটের ব্যাপারে চুক্তি করা হতো। তারা টিকেট বিক্রি করে বিসিবিকে একটা অংশ দিত। গত ৩-৪ আসরে বিসিবি নিজ থেকে টিকেট বিক্রি করছে। যার প্রেক্ষিতে একাদশ আসরে আমরা দেখেছি, ১৩ কোটি টাকা আয় হয়েছে। আট বছরে যেখানে ১৫ কোটি, এক বছরেই ১৩ কোটি। রেকর্ডপত্র আমরা পেয়েছি। বিস্তারিত যাচাই করলেই বোঝা যাবে কী অসঙ্গতি এখানে।”

এছাড়া ২০২০-২১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী আয়োজনে শামিল হয়েছিল বিসিবিও। জাকজমকপূর্ণ কনসার্টসহ বর্ণিল আয়োজন করা হয়েছিল তখন। মুজিব শতবর্ষের ওই আয়োজনে ব্যয়ের হিসেব গড়মিলের কথা বলেন আল-আমিন।

“মুজিব শতবর্ষের ব্যয়ের হিসেবে কিছু অস্বাভাবিকতা আছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো যাচাইবাছাই করে আমরা আমাদের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে প্রতিবেদন দাখিল করব। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।” পরে মুজিব শতবর্ষের আয়োজনে আর্থিক অসঙ্গতির বিস্তারিত তুলে ধরেন আল-আমিনের সঙ্গে থাকা আরেক সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান।

“কনসার্টসহ যে আয়োজন হয়েছিল, সেখানে সব মিলিয়ে ২৫ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। আমরা এই অভিযোগ পেয়েছি। তবে আসলে খরচ হয়েছে ৭ কোটি টাকার মতো। এখানে প্রায় ১৯ কোটি টাকা সরানো হয়েছে বা কিছু হয়েছে। এরকম অভিযোগ আমরা পেয়েছি।”

“বিসিবির অর্থ বিভাগের কাছ থেকে কাগজপত্র চেয়েছি। কিছু কাগজ পর্যালোচনায় আমরা বুঝতে পেরেছি, এখানে প্রায় ১৯ কোটি টাকার হিসেবে অস্বাভাবিকতা আছে। এছাড়া টিকেট বিক্রির ২ কোটি টাকাও এখানে দেখানো হয়নি। তাই এখানে টাকা আত্মসাতের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। সব কাগজপত্র হাতে পেলে সুনির্দিষ্ট করে আমরা বলতে পারব।”

দুদকের অভিযানের পুরোটা সময় সঙ্গে ছিলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরি। অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে দুদককে পূর্ণ সহযোগিতার কথা বললেন তিনি।

“যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, এসবের ব্যাপারে আমাদের কাছে যত কাগজপত্র আছে, সব বিভাগকে সেগুলো দুদকের কাছে দিয়ে সহযোগিতার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। এখন যেহেতু অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে, তাই এর বেশি কিছু বলা উচিত হবে না।”

 

banner close
banner close