
কাতার ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়েছিলেন দুই নারী ফুটবলার আফিদা খন্দকার, শাহেদা আক্তার রিপা এবং দুই নারী ক্রিকেটার সুমাইয়া আক্তার ও শারমিন সুলতানা। রাষ্ট্রীয় সফরের পর শুক্রবার বিকেলে নারী ক্রীড়াবিদদের সফরের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। সেখানে নারী ক্রীড়াবিদরা কাতারে বিশ্বমানের ক্রীড়া স্থাপনা পরিদর্শনের পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের নানা বিষয় কাতারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়েছেন।
২০২২ সালে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল কাতারে। লুসাইল স্টেডিয়ামে ফাইনাল শেষে মেসি বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরার মুহূর্ত পুরো বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের কাছে ঐতিহাসিক। সেই ভেন্যু ও ড্রেসিংরুম ঘুরে অভিভূত বাংলাদেশের দুই ফুটবলার। এ নিয়ে শাহেদা আক্তার রিপা বলেন, ‘আমরা লুসাইলের ড্রেসিংরুমে গিয়েছি। যেখানে মেসিরা ছিলেন। অসাধারণ লেগেছে। ওয়ার্মআপের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। সেটা সেখানে গিয়ে দেখেছি।’
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার লুসাইল স্টেডিয়াম পরিদর্শনে বিস্ময় প্রকাশ করলেন এভাবে, ‘এটা আমাদের কাছে স্বপ্নের মতোই লাগছিল। যে মাঠে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে জিতেছিল। মেসি বিশ্বকাপ নিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটছে সবকিছুই তখন চোখে ভাসছিল। আমরা পুরো স্টেডিয়াম ঘুরে দেখেছি। রাজকীয় পরিবার যেখানে বসেন সেটাও আমরা দেখছি।’
কাতার ফাউন্ডেশন বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ক্লাব ফ্রান্সের প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি), সেই ক্লাবের মালিকানাও রয়েছে কাতার ফাউন্ডেশনের। ফলে কাতারে পিএসজি একাডেমি দল রয়েছে। সেই একাডেমিও পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে খেলোয়াড়রা আঘাত পেলে সেটা কাটিয়ে আবার মাঠে ফিরতে অনেকদিন সময় লাগে। ফুটবল-ক্রিকেটারদের সামর্থ্য থাকলেও অনেক খেলোয়াড় এবং ফেডারেশনের খেলোয়াড়দের ইনজুরিতে পড়ার পর সহায়তা করার সাধ্য থাকে না। তাই এবার কাতার সফরে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা ইনজুরি সংক্রান্ত বিষয়ে বেশি জোর দেয়ার কথা জানান ক্রিকেটার শারমিন সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমাদের রিহ্যাব ফ্যাসিলিটি বেশি নেই। আমরা কাতারকে অনুরোধ করেছি খেলোয়াড়দের ইনজুরি পুর্নবাসনে যেনো সহায়তা পাই। তাদের ওখানে নেইমারদের মতো খেলোয়াড়রা ইনজুরির চিকিৎসা নিয়ে থাকে, আমরা সেটা দেখেছি।’
কাতার ফুটবল ও অ্যাথলেটিক্সে অনেক অগ্রগণ্য থাকলেও ক্রিকেটের প্রচলন সেই অর্থে নেই। ক্রিকেটের ব্যাপারে বাংলাদেশ কাতারের পাশে থাকবে এমন আশ্বাস দিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সুমাইয়া আক্তার।
তিনি বলেন, ‘খুবই সৌভাগ্যের বিষয় আমরা এমন একটি সফরে যেতে পেরেছি। আমরা জানি কাতারে ফুটবল জনপ্রিয়। ক্রিকেট সেভাবে নেই। এরপরও শচীন ও বিরাট কোহলির ছবি দেখেছি। আমরা কাতারের কর্মকর্তাদের বলেছি আপনারা আসেন, দেখেন আমাদের ক্রিকেট কীভাবে চলে। তারা বলেছেন আসবেন।’
বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা নানা সময় দেশের বাইরে খেলতে যান। তখন স্বাগতিক দেশের পক্ষ থেকে যথেষ্ট নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা থাকে। তবে সরকার প্রধানের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সফর ক্রীড়াবিদদের এটাই প্রথম। তাই এ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস আফিদার।
শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
ক্রীড়াবিদদের সফর ও সরকারের ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা একটা যাত্রা শুরু করলাম। কাতার ফাউন্ডেশন বৈশ্বিকভাবে ক্রীড়াঙ্গনে অনেক সম্পৃক্ত। তারা নারীদের নিয়ে কাজ করে। কাতার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মেয়েরা বাংলাদেশে খেলাধুলায় কিভাবে এগিয়ে যেতে পারে সেই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: