শনিবার

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
১৩ আশ্বিন, ১৪৩১
২৪ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

দিনমজুরের সন্তান থেকে শ্রীলঙ্কার মসনদে দিশানায়েকে

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৭:৫০

শেয়ার

দিনমজুরের সন্তান থেকে শ্রীলঙ্কার মসনদে দিশানায়েকে
অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে। ছবি: সংগৃহীত

শ্রীলাঙ্কার দশম ও প্রথম বামপন্থি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের ৫৫ বছর বছর বয়সী মাক্সবাদী নেতা অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে।

বছর দুয়েক আগে আলোচিত গণঅভ্যুত্থানের পর অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে পেয়েছেন ৫৬ লাখ ৩৪ হাজার ৯১৫ ভোট, যা মোট ভোটের শতকরা ৪২ দশমিক ৩১ ভাগ।

অন্যদিকে সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৪৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩৫ ভোট, শতকরায় ৩২ দশমিক ৭৬ ভাগ। অন্যদিকে রনিল বিক্রমাসিংহে পেয়েছেন ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৬৭ ভোট (শতকরা ১৭ দশমিক ২৭ ভাগ)।

কেউই ৫০ ভাগ ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনা হয়। সেখানে বিজয়ী হন অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। 

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে ১৭৭ কিলোমিটার দূরের অনুরাধাপুরা জেলার থামবুত্তেগামা গ্রামে জন্ম দিশানায়েকের। গ্রামীণ মধ্যবিত্ত এক পরিবারের সন্তান তিনি। দিনমজুর বাবা ও গৃহিনী মায়ের সন্তান দিশানায়েকে কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক করেছেন। ছাত্রজীবন থেকে জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩৯ জন। তবে ভোট গ্রহণ শেষে তিনজনের নাম আলোচনায় শোনা যাচ্ছিল এই অনুরা কুমারা দিসানায়েক।

১৯৬৮ সালে জন্ম নেয়া দিসানায়েক ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি শ্রীলঙ্কার দুর্নীতি ও দুর্বল শাসনের কঠোর সমালোচক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদদের চেয়ে নিজেকে ভিন্ন হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন দিসানায়েক। যদিও জেভিপির মাত্র তিনটি আসন রয়েছে ২২৫ সদস্যের শ্রীলঙ্কার সংসদে, তবুও সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী।

১৯৯৫ সালে দিসানায়েক জেভিপির পলিটব্যুরোতে যোগ দেন। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৪ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি কৃষি, প্রাণীসম্পদ, ভূমি ও সেচ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রধান বিরোধী হুইপ হিসেবে কাজ করেন।

২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ১৭তম জাতীয় কনভেনশনে তিনি জেভিপির নেতা নির্বাচিত হন। এই দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা তাকে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।

দিসানায়েক তার সৎ এবং সোজাসাপ্টা রাজনীতির কারণে সাধারণ মানুষের কাছে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ক্ষমতার জন্য নয়, বরং সমাজের শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের জন্য লড়াই করার তার সংকল্প তাকে আলাদা করে তুলে। দুর্নীতি বিরোধী অবস্থান, আর্থিক ন্যায়বিচার এবং দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের আহ্বান তাকে বিশেষভাবে পরিচিত করেছে।

দিসানায়েক নিজেকে একজন সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি কোনো ধনী বা ক্ষমতাশালী পরিবারেরও সদস্য নন, যা তাকে অনেক ভোটারের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।

বছর দুয়েক আগে শ্রীলঙ্কা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল, যখন দেশটির অর্থনৈতিক সংকট চরমে পৌঁছায়। বিপুল অঙ্কের ঋণের বোঝা সরকারকে অসহায় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি ও মূল্যস্ফীতি জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে, নতুন প্রেসিডেন্টের ওপর যে গুরুদায়িত্ব থাকবে তা স্পষ্ট।