যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হেলেন। এতে এখন পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন অন্তত ৪৬ লাখ মানুষ।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের বিগ বেন্ড শহরের উপকূলে আছড়ে পড়ে হেলেন। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪০ মাইল।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত আঘাত হানা ১৪তম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এটি। এর আনুমানিক দৈর্ঘ্য ৪২০ মাইল (৬৭৫ কিলোমিটার)। ২০১৭ সালের আইডা এবং ১৯৯৬ সালে আঘাত হানা ওপালের দৈর্ঘ্য ছিলো ৪৬০ মাইল। দৈর্ঘ্যের বিচারে হেলেন তৃতীয় বৃহত্তম ঝড়।
ব্যাপক ধ্বংসাত্মক হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া অফিস হেলেনকে ‘ক্যাটাগরি ৪’ বা সবচেয়ে ঘূর্ণিঝড়ের তকমা দিয়েছে।
বীমা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এই ঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতি বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এদিকে হেলেনের আঘাতে বিগ বেন্ড এব তার আশপাশের এলাকার অজস্র গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে। অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন বহু এলাকার মানুষ।
ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, টেনেসি, উত্তর ক্যারোলাইনা এবং দক্ষিণ ক্যারোলাইনার অধিকাংশ এলাকায় প্রবল বর্ষণ, ঝড়ো হাওয়া এবং আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে।
পানিতে আটকে পড়াদের উদ্ধারে স্থানীয় কর্মকর্তারা নৌকা, হেলিকপ্টার এবং বড় যানবাহন দিয়ে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিগ বেন্ডে আছড়ে পড়ার পর কিছুটা দুর্বল হয়ে জর্জিয়া, টেনেসি, উত্তর ক্যারোলাইনা এবং দক্ষিণ ক্যারোলাইনার দিকে এগোতে হতে থাকে হেলেন। শুক্রবার বিকেলের দিকে শক্তি হারিয়ে মৌসুমি ঝড়ে পরিণত হয় হেলেন, এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার।
কাউন্টি শেরিফ বব গুয়ালটিরি জানান, শুক্রবার থেকে ফ্লোরিডায় অন্তত আটজন মারা গেছেন, যার মধ্যে উপকূলীয় পিনেলাস কাউন্টিতেই অন্তত পাঁচজন মারা যান।
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস জানিয়েছেন, হেলেন আঘাতে রাজ্যটিতে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান ক্যাম্প জানান, সেখানে নিহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। নিহতদের মধ্যে দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগের একজন উদ্ধারকর্মীও রয়েছেন।
বন্যা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে জর্জিয়ার ১৫০টিরও বেশি সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। পানিবন্দি অবস্থায় ভবনগুলোতে আটকা পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের উদ্ধার কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। মার্কিন সেনাবাহিনীর ন্যাশনাল গার্ড শাখার এক হাজার সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্রায়ান ক্যাম্প।
সিবিএস নিউজ বলছে, দক্ষিণ ক্যারোলিনায় অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন।
গভর্নর রয় কুপার বলেন, প্রতিবেশী উত্তর ক্যারোলিনা ঝড়ের আঘাতে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। রাজ্যটিতে ১১টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
ট্র্যাকিং সাইট পাওয়ার আউটএজ ডট ইউএস বলছে, দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারোলিনায় ত্রিশ লাখের বেশি বাড়ি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান শুক্রবার পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিলো।
আরও পড়ুন: