রবিবার

২০ এপ্রিল, ২০২৫
৬ বৈশাখ, ১৪৩২
২২ শাওয়াল, ১৪৪৬

হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে এগুচ্ছে ঢাকা, দিল্লির উত্তরের অপেক্ষায় ইউনূস সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:২২

শেয়ার

হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে এগুচ্ছে ঢাকা, দিল্লির উত্তরের অপেক্ষায় ইউনূস সরকার
ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য দেশে ফেরত চেয়ে ভারতকে কূটনৈতিক চিঠি (নোট ভার্বাল) পাঠিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যা পরিচালনার প্রধান আসামিসহ একাধিক হত্যা মামলায় অভিযুক্ত স্বৈরশাসক হাসিনাকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান ‘বন্দি-বিনিময়’ চুক্তির আওতায় দিল্লির কাছে মঙ্গলবার এ চিঠি পাঠায় শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার, যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুহাম্মদ রফিকুল আলম গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

তবে, আপাতত দিল্লি থেকে এ বিষয়ে উত্তর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে চাইছে ড. ইউনূস প্রশাসন। দিল্লিতে কূটনৈতিক চিঠি পাঠানোর পর এই মুহূর্তে কিছুটা ‘ধীরে চলো’ নীতিতেই এগোতে চাইছে বাংলাদেশ। ভারতের থেকে উত্তর পাওয়ার পরই হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার প্রসঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ করার কথা ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ বিষয়ে যে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে, তাও বুঝতে পারছে ঢাকা।

পশ্চিমবঙ্গের বহুল প্রচলিত ভারতীয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বুধবার সকালে তাদের অনলাইন ভার্সনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলমের বরাতে এমন একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী আনন্দবাজারের কাছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছেন, বন্দি বিনিময় চুক্তিতে কোনও সময়সীমার কথা উল্লেখ নেই। সে ক্ষেত্রে দিল্লির উত্তর পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে। একটা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও কোনও জবাব না পেলে, ফের এক বার চিঠি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন এ মুখপাত্র।

এ ক্ষেত্রে কতটা সময় লাগতে পারে- আনন্দবাজারের এমন প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করতে চাননি রফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘যতটুকু সময়ে দুই দেশের সরকার মনে করবে এটি সঠিক, সেই ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে মাত্র দুইদিন হলো দিল্লিতে কূটনৈতিক চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকা। তাই আপাতত সময় ঘিরে কোনও জল্পনা বা তাড়াহুড়ো চাইছে না অন্তর্বর্তী সরকার।’

জুলাই-আগস্ট মাস ধরে চলা বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের জেরে গত ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। জনরোষ থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনা তখন সাময়িকভাবে ভারতে আশ্রয় নেন এবং এখন পর্যন্ত ওই দেশেই অবস্থান করছেন।

হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সাইদুর রহমানের খুনের ঘটনায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে সে দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ২৩৩টি ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮টি ক্ষেত্রে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। হাসিনাসহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে আগেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল।

হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে অক্টোবরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ফিনান্সিয়াল টাইম্‌স’-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারেও ড. ইউনূস তার অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের কথা জানান।

এখনই হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর কোনও ভাবনা নেই জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তখন বলেছিলেন, ‘হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আদালতের রায় ঘোষণা হলে আমরা ভারতের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে তাকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করব।’

তবে, আদালতের রায় ঘোষণার আগেই হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারত সরকারকে কূটনৈতিক চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। ইন্টারপোলের সঙ্গেও যোগাযোগের কথা ভাবছে ইউনূস প্রশাসন। দিল্লিও ইতিমধ্যে ঢাকার কূটনৈতিক চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছে।

দিল্লি অবশ্য এখনই এ নিয়ে সরকারিভাবে কোনও মন্তব্য করেনি আনন্দবাজারের কাছে।

আনন্দবাজার অবশ্য ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সূত্র ব্যবহার করে দাবি করেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পাঠানো কূটনৈতিক চিঠির ‘আইনি বৈধতা’ কতটা, তা খতিয়ে দেখবে নয়াদিল্লি। কোন অন্তর্বর্তী সরকার অন্য রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের কাছে রাজনৈতিক কোন নেতাকে ফেরত চাইলে, তার সমস্ত আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়।

বিদেশ মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার বলেছে, বাংলাদেশের কূটনৈতিক চিঠির উত্তর ভারতের পক্ষ থেকে অবশ্যই ‘যথাসময়ে’ দেওয়া হবে। কিন্তু তার জন্য কোনও তাড়াহুড়ো করা হবে না। বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সূত্রের খবর- সব দিক খতিয়ে দেখে জবাব দিতে কয়েক মাস লাগতে পারে।

banner close
banner close