সোমবার

৩১ মার্চ, ২০২৫
১৭ চৈত্র, ১৪৩১
,

ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপ: ম্যাক্রোঁ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ, ২০২৫ ২২:০৮

শেয়ার

ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপ: ম্যাক্রোঁ
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ/ ছবি: ইউএনবি

রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তাবিত নিজস্ব সেনাবাহিনী মোতায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপ। কিয়েভের গুরুত্বপূর্ণ শহর ও কৌশলগত স্থাপনাগুলোতে এই সেনা মোতায়েন করা হতে পারে জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বাহিনীতে থাকতে পারে ১০ থেকে ৩০ হাজার সেনা।

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার প্যারিসে ৩১টি দেশের নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।

সেনা মোতায়ন নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ম্যাক্রোঁ। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বৃহস্পতিবার প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে ৩০টি দেশের নেতাদের অংশগ্রহণে শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।

ম্যাক্রোঁ বলেন, ইউক্রেনের মাটিতে যারাই হামলা চালাবে, তাদেরও পালটা হামলার মুখোমুখি হতে হবে। আমাদের রণকৌশল অনুযায়ী সেনারা শত্রুদের মোকাবিলা করবে।

ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনে যে-সব দেশ সহায়তা করতে আগ্রহী; তাদের নিয়ে একটি জোট গঠন করতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তিনি কাজ করছেন বলে জানান ম্যাক্রোঁ।

ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত ও রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা প্রতিহত করতে এই উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে অভিমত দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। তবে রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার জবাবে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে; সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।

ম্যাক্রোঁ জানান, প্রস্তাবিত সশস্ত্র বাহিনীর সেনারা শুরুতেই ফ্রন্টলাইনে (সম্মুখযুদ্ধে) রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না। এমনকি এই বাহিনী ফ্রন্টলাইনে অবস্থানও করবে না। ইউক্রেনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর ও কৌশলগত ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তায় থাকবে তারা।

তিনি বলেন, ইউক্রেনকে সমর্থন জানাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও জোটগুলো এই উদ্যোগ নিয়েছে। যু্দ্ধ জড়াতে নয় বরং ইউক্রেনে সংঘাত বন্ধে এটি একটি শান্তি প্রস্তাব বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া সংঘাত একমাত্রই রাশিয়াই চায় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ৩১টি দেশের নেতার উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে। এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে নিরাপত্তা সম্মেলন আয়োজন করে প্যারিস। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোসহ সাতটি দেশের নেতারা সম্মেলনে অংশ নেয়।

এই সম্মেলনে উপস্থিত না থাকলেও আলোচনায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে শান্তিচুক্তির পর ইউক্রেনের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবে প্রকাশ্যে কোনো আগ্রহ দেখায়নি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।

অবশ্য ইউরোপীয় নেতাদের এই পরিকল্পনায় অনাগ্রহ দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন না তিনি।

তবে ইউরোপের নেতারা জানান, রুশ প্রেসিডেন্টের অতীত কার্যকলাপের ফলে তার প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না তারা।

এ সময় ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল ও ২০২২ সালের পূর্ণমাত্রায় ইউক্রেনে হামলা চালানোর ঘটনা উল্লেখ করে তারা বলেন, শান্তিচুক্তি হওয়ার পরও পুনরায় হামলা চালাতে পারে পুতিন। সম্ভাব্য এই হামলা প্রতিহত করতেই ইউক্রেনে সেনা মোতায়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ফরাসি কর্মকতা জানান, ইউরোপীয় জোটের সেনাবাহিনী ফ্রন্টলাইন থেকে কিছুটা দূরে ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে, দিনিপার নদীর তীরে মোতায়ন করা হতে পারে।

আবার ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চল বা প্রতিবেশী কোনো দেশেও সেনা মোতায়েন করা হতে পারে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

ব্রিটিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছে, প্রস্তাবিত ওই বাহিনীতে ১০ থেকে ৩০ হাজার সেনা থাকতে পারে। স্নায়ুযুদ্ধের পর সেনা সংকুচিত করা ইউরোপের দেশগুলোর সেনাবাহিনী গঠনের এই উদ্যোগকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

 

banner close
banner close